বরিশালের শহীদ অ্যাডভোকেট আবদুর রব সেরনিয়াবাত আইনজীবী ভবনে দক্ষিণাঞ্চলের ৯টি জেলার প্রতিনিধিদেরমতবিনিময় সভা। ছবি
এবার গ্যাসের দাবিতে একাট্টা হয়েছে বরিশালবাসী। স্থানীয় বাসিন্দাদের চাহিদা না মিটিয়ে ভোলার গ্যাস রাজধানীতে সরবরাহের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে দক্ষিণ জনপদের নয়টি জেলার মানুষ। দাবি, নিজেদের সম্পদ সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে স্থানীয়দের বাসাবাড়ি ও শিল্পকারখানায়। দাবি না মানলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারিও তাদের।
১৯৯৪ সালে ভোলার বোরহানউদ্দিনে প্রথম গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের পর কেটে গেছে প্রায় ত্রিশ বছর। সবশেষ নবম গ্যাসকূপ হিসেবে তালিকায় যুক্ত হয়েছে জেলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্র। বিশেষজ্ঞদের দাবি, নয়টি কূপে গ্যাস মজুদ আছে এক দশমিক সাত ট্রিলিয়ন গ্যাস।
এতো এতো গ্যাসের ভাণ্ডার থাকা সত্ত্বেও বরাবরই গ্যাস সুবিধা বঞ্চিত দক্ষিণ জনপদের মানুষেরা। এখনো বাসাবাড়িতে জ্বলে কাঠের চুলো। একইভাবে পদ্মাসেতুর দ্বার উন্মোচনের পর তুমুল সম্ভাবনা তৈরি হলেও বঞ্চিত শিল্প-কলকারখানাও।
শনিবার (১৯ আগস্ট) সকালে বরিশালের শহীদ অ্যাডভোকেট আবদুর রব সেরনিয়াবাত আইনজীবী ভবনে দক্ষিণাঞ্চলের ৯টি জেলার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ৯টি জেলা হলো- বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন ‘ভোলার গ্যাস রক্ষায় দক্ষিণাঞ্চলের নাগরিক আন্দোলন’ এর আহ্বায়ক মোবাশ্বের উল্লাহ চৌধুরী এবং সভা সঞ্চালনা করেন নাগরিক আন্দোলনের সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তী।
সভায় মূল প্রতিপাদ্য উপস্থাপন করেন ভোলার গ্যাস রক্ষায় দক্ষিণাঞ্চলের নাগরিক আন্দোলন বরিশাল জেলা শাখার আহ্বায়ক অধ্যাপক শাহ আজিজ খোকন।
এ সময় বক্তারা বলেন, ভোলার গ্যাসসম্পদ উন্নয়নবঞ্চিত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের কাছে একটি আশার আলো বয়ে এনেছিল। ১৯৯৪ সালে ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার শাহাবাজপুরে সর্বপ্রথম গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের পর পর্যায়ক্রমে ভোলা সদর উপজেলায় ভোলা উত্তর ও নতুন আবিষ্কৃত ইলিশা-১ গ্যাসক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাপেক্স-এর তত্ত্বাবধানে মোট ৯টি কূপে বিপুল পরিমাণ গ্যাস (প্রায় ৩ টিসিএফ) আবিষ্কৃত হয়েছে।
‘অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এই গ্যাস ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের কলকারখানায় ও আবাসিক খাতে সংযোগ দেয়ার জন্য এ অঞ্চলের মানুষের দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু সরকার এ দাবি উপেক্ষা করে গত ২১ মে বেসরকারি কোম্পানি ইন্ট্রাকোর সাথে ভোলার গ্যাস ঢাকা, আশুলিয়া, গাজীপুর, ময়মনসিংহসহ অন্যত্র ‘সরবরাহের জন্য ১০ বছর মেয়াদি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এ চুক্তি অনুন্নত দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের স্বপ্নকে বহুগুণ পিছিয়ে দেবে।
বক্তারা বলেন, গত ১৫ জুন ভোলার মোবাশ্বের উল্লাহ চৌধুরীকে আহ্বায়ক ও ডা. মনীষা চক্রবর্তীকে সদস্য সচিব করে ‘ভোলার গ্যাস রক্ষায় দক্ষিণাঞ্চলের নাগরিক আন্দোলন’ নামে একটি মঞ্চ গঠন করে ইতোমধ্যেই বরিশাল ও ভোলায় সভা-সমাবেশ-মিছিল-পদযাত্রা হয়েছে ও লক্ষাধিক মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহের অভিযান শুরু হয়েছে।
বক্তারা এ আন্দোলনের সাফল্য অর্জনের জন্য রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের সাথে দক্ষিণাঞ্চলের সকল জেলার শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন।
মতবিনিময় সভা থেকে দক্ষিণের ৯ জেলায় ভোলার গ্যাস রক্ষায় দক্ষিণাঞ্চলের নাগরিক আন্দোলনের শাখা কমিটি গঠন ও সভা-সমাবেশ-গণস্বাক্ষর সংগ্রহের মাধ্যমে এই আন্দোলনকে শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।