৭৯টি প্রতিষ্ঠানকে তিন হাজার ৯৫০ টন ইলিশ মাছ ভারতের রফতানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। ফাইল ছবি
আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে এবার বাংলাদেশ থেকে ভারতে ৩ হাজার ৯৫০ টন ইলিশ রফতানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। তবে এ ক্ষেত্রে সাতটি শর্ত মানতে হবে রফতানিকারকদের। এ অনুমতির মেয়াদ আগমী ২০ অক্টোবর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ইলিশ মাছ রফতানির বিষয়ে পাওয়া আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করে শর্ত সাপেক্ষে ৭৯টি প্রতিষ্ঠানকে তিন হাজার ৯৫০ টন ইলিশ ভারতের রফতানির অনুমতি দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন,
শতাধিক আবেদনের যাচাই-বাছাই শেষে তিন হাজার ৯৫০ টন ইলিশ ভারতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
দুর্গাপূজা সামনে রেখে গত ১ সেপ্টেম্বর কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে এক আবেদনে পাঁচ হাজার টন ইলিশের চাহিদার কথা জানিয়েছেন কলকাতার ব্যবসায়ীরা। পরে ৪ সেপ্টেম্বর সেই আবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আসে।
গত বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানান, এবারের দুর্গাপূজায় ভারতে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টন ইলিশ রফতানি করা হতে পারে।
দেশে বছরে ৬ লাখ টন ইলিশ উৎপাদন হয় এমন তথ্য জানিয়ে মন্ত্রী বলেন,
সেই হিসাবে প্রতিদিন যদি আমরা ধরি, তাহলে গড়ে ২ হাজার টন ইলিশ ধরা হয়। বড়জোর ৫ হাজার টন ইলিশ রফতানি করব। তাতে সারা বছরের দুই দিনের উৎপাদন আমরা তাদের দেব এই পূজার সময়।
মন্ত্রী বলেন, ‘পাঁচ হাজার টন ইলিশ রফতানি আমাদের লক্ষ্য। গত বছর এই সমপরিমাণ দিয়েছি। আগের বছরও পাঁচ হাজার কিংবা তিন হাজার দিয়েছিলাম। তিন হাজার দিয়ে যদি পারি, তাহলে এর বেশি আমরা দেব না।’
এতে বাজারে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন টিপু মুনশি। কবে থেকে এটা কার্যকর হবে, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমরা পূজার সময়ে প্রতি বছর দিই। এবারও দেব।
তিনি বলেন, আবেদনের ওপর নির্ভর করে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে হয়ত ৫০ টন করে দেব। এ পর্যন্ত ৬০ থেকে ৬৫টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। তাতে তিন হাজার বা সাড়ে তিন হাজার টন ইলিশ পাঠানো হতে পারে।
গত বছর পূজার সময় ২ হাজার ৯০০ টন ইলিশ রফতানির অনুমতি দেয়া হয়েছিল। তবে সে সময়ে রফতানি হয়েছে ১ হাজার ৩০০ টন। আগের বছরগুলোতেও একই পরিস্থিতি হয়েছিল। অনুমোদনের তুলনায় রফতানির পরিমাণ ছিল ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কম।
রফতানি শাখার একজন উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন,
দুর্গাপূজা উপলক্ষে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এবারও ইলিশ রফতানির অনুমোদন দেয়া হয়েছে। গতবার যেসব প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে অনেকে নির্ধারিত পরিমাণ মাছ রফতানি করতে পারেনি। অনেকে একেবারেই রফতানি করতে পারেনি। মাছ রফতানির বিষয়টি মূলত কি পরিমাণ মাছ ধরা পড়ল সেটির উপরও অনেকটা নির্ভর করে। তাই আমরা প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা দেখে অনুমতি দিয়েছি।
ইলিশ রফতানির শর্ত
ভারতের ইলিশ রফতানির ক্ষেত্রে সাতটি শর্ত দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেগুলো হলো, এক্ষেত্রে রফতানি নীতি ২০২১-২০২৪ বিধিবিধান অনুসরণ করতে হবে। শুল্ক কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রফতানি অনুমতি পাওয়া পণ্যের কায়িকপরীক্ষা যথাযথভাবে করতে হবে।
প্রতিটি চালান জাতীয়করণ শেষে রফতানি সংক্রান্ত সব কাগজ export2permit@minicom.gov.bd ঠিকানায় ই-মেইল করার শর্ত দিয়েছে মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি অনুমোদিত পরিমাণের চেয়ে বেশি রফতানি করা যাবে না।
এছাড়া প্রতিটি পণ্যচালান রফতানিকালে শুল্ক কর্তৃপক্ষ অটোমেটিক সিস্টেম ফর কাস্টম ডেটা (এএসওয়াইসিইউডিএ) ওয়ার্ল্ড সিস্টেম পরীক্ষা করে অনুমোদিত পরিমাণের অতিরিক্ত পণ্য রফতানি না করার বিষয়টি নিশ্চিত হবেন। এ অনুমতির মেয়াদ আগমী ২০ অক্টোবর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
তবে সরকার মৎস্য আহরণ ও পরিবহনের ক্ষেত্রে কোনোরূপ বিধিনিষেধ আরোপ করলে তা কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ অনুমতির মেয়াদ শেষ হবে। সরকার প্রয়োজনে যে কোনো ইলিশ রফতানি বন্ধ করতে পারবে। এ অনুমতির কোনোভাবেই হস্তান্তরযোগ্য না, অনুমোদিত রফতানিকারক ছাড়া সাব-কন্ট্রাক্ট রফতানি করা যাবে না।