যশোরে সরকারি খামারে লেয়ার মুরগি পালন। ছবি:
জনকল্যাণে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না যশোরের সরকারি হাঁস-মুরগির খামারটি। ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এ প্রতিষ্ঠান থেকে ডিম, মুরগি, মুরগির বাচ্চা সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। তবে এক সময় এখানে ছয় টাকায় ডিম ও ১২০ টাকায় দেশি মুরগি পাওয়া যেত বলে জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা জানান, আগে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে কম দাম মুরগি ও ডিম সংগ্রহ করতে পারতো সাধারণ মানুষ। সেইসঙ্গে তৃণমূল পর্যায়ে মুরগির খামার বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখতে পারতো প্রতিষ্ঠানটি।
এ বিষয়ে শংকরপুর এলাকার বাসিন্দা মীর মঈন হোসেন মূসা বলেন, মুরগি ও ডিম পাওয়া যায় কিনা সেটা জানতে খামারে গিয়েছিলাম; কিন্তু পেলাম না। বাজারে ডিম ও মুরগির যে পরিমাণ দাম তাতে সরকারি এ প্রতিষ্ঠান থেকে নিতে পারলে কিছুটা সাশ্রয় হতো। কিন্তু গত ১০ বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠানটি থেকে আমরা কিছুই নিতে পারছি না। এতে করে আমরা এলাকাবাসী বঞ্চিত হচ্ছি।
আশিকুল ইসলাম নামে অপর একজন বলেন, প্রায় ১০/১২ বছর আগে আমরা এ প্রতিষ্ঠান থেকে ডিম ও মুরগি সাশ্রয়ী মূল্যে নিতে পারতাম। আমাদের আমিষের চাহিদা পূরণ হতো। কিন্তু এখন সেটা পাচ্ছি না। যখন আসি বলা হয় ডিম নাই, মুরগি নাই। বিভিন্ন এলাকা থেকে মুরগির বাচ্চা নিতে এসেও ফিরে যায়। আমরা চাই এ প্রতিষ্ঠানটি জনকল্যাণে কাজ করুক।
খামারি জাহিদুল ইসলাম নামে অপর একজন বলেন, বর্তমানে বাজারে এক কেজি মুরগির দাম ২৯০ টাকা ও প্রতি পিস ডিম ১২ টাকা। অথচ এ প্রতিষ্ঠান থেকে ডিম ৬ টাকা ও মুরগি ১২০ টাকায় নেয়া সম্ভব ছিলো। আমাদের প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হতো। স্বল্প মূল্যে কেবল আমিষের চাহিদা পূরণ নয়, প্রতিষ্ঠানটি শতভাগ সেবা দিলে তৃণমূল পর্যায়ে মুরগির খামার বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখতে পারতো।
যশোর পোল্ট্রি খামার মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি মুরাদ হোসেন বলেন, বর্তমানে মুরগি ও ডিমের আকাশচুম্বী যে দাম তাতে আমরা হতাশাগ্রস্ত। দেশের প্রতিটি জেলায় এ ধরণের সরকারি খামার রয়েছে। এসব খামারে যদি মুরগির পালন বাড়ানো হতো তাহলে জনগণ ডিম, মুরগি যেমন পাবে তেমনি বাচ্চা সংগ্রহ করে লালন পালনও করতে পারবে। এলাকায় ছোট ছোট খামার তৈরি হবে। এটা সম্ভব হলে ডিম ও মুরগি উৎপাদন বেড়ে যাবে। তখন আর আমদানির চিন্তা করা লাগবে না বরং রফতানি করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, সরকার একটু সচেষ্ট হলে বরাদ্দ বাড়িয়ে দিলে এ কাজ করা সম্ভব। এ জন্য সরকারকেই এগিয়ে আসার দাবি জানান তিনি।
এদিকে সরকারি এ খামারের উপ-পরিচালক মো. বখতিয়ার হোসেনে দাবি, তারা নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে খামারটি পরিচালনা করছেন। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানের ২৮টি পদের মধ্যে ২২টি পদই শূন্য। সেইসঙ্গে পর্যাপ্ত বরাদ্দও নেই। জোড়াতালি দিয়ে চলার কারণে তারা পিছিয়ে পড়েছেন। খামারের ২৪টি শেড রয়েছে। যার মধ্যে ১০টি শেডকে কোনো রকমে চালু রেখেছেন। খামারের অন্যান্য অবকাঠামো জরাজীর্ণ। এগুলো মেরামত না করলে মুরগি পালন করা সম্ভব না।
তিনি আরও বলেন, আমাকে যদি পর্যাপ্ত জনবল ও বরাদ্দ দেয়া হয় তাহলে আমি এ প্রতিষ্ঠানকে সত্যিকার অর্থেই জনকল্যাণমুখী করে তুলতে পারবো। কারণ আমার চাকরি জীবনের শুরুতেই এ খামারেই আমি দায়িত্ব পালন করেছি। তখন মুরগির কোলাহলে চারপাশ মুখরিত থাকতো। মানুষ প্রতিদিন লাইন ধরে ডিম ও মুরগি কিনতে পারতো। পাশাপাশি মুরগির বাচ্চা নিয়ে খামার তৈরি করে বেকার যুবকরা স্বাবলম্বী হয়েছিল।
সরকারি এ মুরগি খামারের দেয়া তথ্য মতে, পাঁচ মাস আগে খামারে নতুন করে মুরগির বাচ্চা তোলা হয়। বর্তমানে ৫টি শেডে প্রায় দুই হাজার মুরগি পালন করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারি উদ্যোগে নাগরিকের মাংস-ডিমের চাহিদা পূরণ ও তৃণমূল পর্যায়ে খামার সম্প্রসারণে ১৯৫৯ সালে যশোর শহরের শংকরপুরে ৯ দশমিক ৩ একর জমিতে গড়ে তোলা হয় সরকারি হাঁস-মুরগি খামার। বছর কয়েক আগে প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তন করে সরকারি মুরগি প্রজনন ও উন্নয়ন খামার করা হয়। ২৪টি শেড ও ৬টি ইনকুবেটর সমৃদ্ধ এ খামারে বছরে ২০ হাজার বাচ্চা পালনের মাধ্যমে তিন হাজার লেয়ার (ডিম দেয়া) মুরগি তৈরি এবং তার মাধ্যমে দুই লাখ ৫০ হাজার বাচ্চা উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে।
পাশাপাশি ১৫ হাজার মুরগি এবং দুই লাখ ৯০ হাজার ডিম উৎপাদন করে বিক্রি করা সম্ভব। কিন্তু বিগত ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এ প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে মুরগি, মুরগির বাচ্চা ও ডিম সরবরাহ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।