খাকদোন নদীর তীরে মাছের বাজারে বরাদ্দ দেয়া প্লটে গড়ে উঠা একটি নির্মাণাধীন ভবন। ছবি:সংগৃহীত
বরগুনার খাকদোন নদীর তীরে জেলা শহরের প্রধান মাছ বাজার। ২০০০-২০০১ অর্থবছরে এ বাজারের মৎস্য ব্যবসায়ীদের কাছে জমি বন্দোবস্ত দেয় জেলা প্রশাসন। সম্প্রতি ফের ৭৯টি ঘরের বন্দোবস্ত দিলে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ ওঠে। এদিকে, এ জমির মালিকানা দাবি করছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। বিষয়টি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দাবি, বন্দোবস্ত দেয়া জমি ২০০৪ সালের ১৩ অক্টোবর গেজেট করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে দিয়েছেন খোদ রাষ্ট্রপতি। অথচ, নিয়মবহির্ভূতভাবে এ জমি বন্দোবস্ত দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
জমিতে ঘর নির্মাণ বন্ধের জন্য নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। মাছ বাজারের জমির বন্দোবস্ত বাতিল করে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করতে গত ১০ সেপ্টেম্বর বরগুনার জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন।
এ বিষয়ে পটুয়াখালীর নদীবন্দরের সহকারী বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা মামুন-অর-রশীদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘বরগুনার মাছ বাজারের জমি ২০০৪ সালে মহামান্য রাষ্ট্রপতি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়কে দেয়ার পর ২০১৬ সাল পর্যন্ত আমরা খাজনাও দিয়েছি। এরপর বরগুনা জেলা প্রশাসন খামখেয়ালি করে আমাদের কাছ থেকে খাজনা নিচ্ছেন না। তারা নদীবন্দরের জমি নিজেদের বলে দাবি করছেন, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। রাষ্ট্রপতির গেজেট করা জমি জেলা প্রশাসন কোনোভাবেই দাবি করতে পারে না। তারা আমাদের এ বাজারের জমি বন্দোবস্ত দিয়েছে। অথচ আমাদের কোন প্রকার অবগত করেনি; এমনকি একটি চিঠি দেয়ারও প্রয়োজন বোধ করেনি। এখানে তারা খামখেয়ালি করছে।’
এদিকে, মাছ বাজারের জমি বন্দোবস্ত দেয়া নিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
জমি বন্দোবস্ত দেয়ায় অনিয়মের বিষয়ে ব্যবসায়ী দেলোয়ার বলেন, ‘প্রতিটি প্লটের জন্য আমরা চার লাখ টাকা করে বরগুনা মাছ বাজার ক্ষুদ্র মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলামের কাছে জমা দিয়েছি। শুনেছি সেই টাকা জেলা প্রশাসনের কাছে জমা দেয়া হয়েছে।’
সোহেল রানা নামে অপর এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘প্রশাসনের কথা বলে আমাদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয়েছে। আমি টাকা দিয়ে এখন প্লট পাচ্ছি না, আর টাকাও ফেরত পাচ্ছি না।’
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, প্লট বরাদ্দ দেয়ার কথা বলে এ মাছ বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আট কোটি টাকা উত্তোলন করেছেন মাছ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ। আমরা দ্রুত এ টাকা ব্যবসায়ীদের কাছে ফেরত দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া এখানে ব্যবসায়ী নন – এমন অনেকেই প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন, যা এ বাজারের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
এদিকে, এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বরগুনা মাছ বাজার ক্ষুদ্র মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম। তার দাবি, জমি বন্দোবস্ত নেয়ার সরকারি ফি ব্যবসায়ীরা তার কাছে দিয়েছেন। তিনি চালানের মাধ্যমে সেই অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিয়ে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করেছেন। এছাড়া অন্য কোন অর্থ লেনদেনের বিষয়ে তিনি অবগত নন।