বর্তমানে পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি হচ্ছে ৮ হাজার টাকা। গ্রাফিক ছবি
পাঁচ বছর পর এবার কত টাকা বাড়ছে পোশাক শ্রমিকদের বেতন? সেই প্রশ্নের উত্তর পেতে অবশেষে আগামী রোববার (২২ অক্টোবর) আনুষ্ঠানিকভাবে নিম্নতম মজুরি বোর্ডে উঠতে যাচ্ছে দুইটি প্রস্তাব। আভাস মিলেছে, সর্বনিম্ন মজুরি ২ হাজার ৪০০ টাকা বাড়াতে চান শিল্প মালিকরা। এদিকে সর্বনিম্ন ৮ হাজার টাকার বেতনকে এবার প্রায় তিনগুণ করার দাবি তুলতে চান শ্রমিকরা।
যাদের সুঁই সুতার সেলাইয়ে গাঁথা হচ্ছে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গল্প-উপাখ্যান; সেই পোশাক শ্রমিকদের বেতন দেশের ইতিহাসে ৭ম বারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে বাড়তে যাচ্ছে।
কাজেই বর্তমানে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে কত টাকা হতে যাচ্ছে তাদের মাসিক বেতন? যেখানে ২০১৩ সালের সর্বনিম্ন মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা থেকে বেড়ে ২০১৮ সালে ৮ হাজার টাকা হয়েছে। এবার পোশাক শ্রমিকদের মজুরি সর্বনিম্ন ১০ হাজার ৪০০ টাকা করতে চান মালিকপক্ষ।
রফতানি বাজার আর দেশের মূল্যস্ফীতির হিসাব কষে এমন আভাসই দিচ্ছেন শিল্প মালিকরা। সেই সঙ্গে তারা গ্রেড কমানোর প্রস্তাবও দিতে চান।
এবিষয়ে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন,
আমাদের প্রথম দাবি হচ্ছে, এই বেতনের গ্রেড কমাতে হবে। তাছাড়া আমি মনে করি মোট চারটা গ্রেড হলেই চলে। বেতনের চতুর্থ গ্রেডে থাকবেন নতুন কর্মীরা, যারা হেলপারের কাজ করে থাকেন। আমরা মনে করি, বিগত পাঁচ বছরের গড় মূল্যস্ফীতির হার হচ্ছে ৬ শতাংশের নিচে। আমরা যদি সেটি ৬ শতাংশও ধরি, সেক্ষেত্রে হিসাব অনুসারে বিদ্যমান ৮ হাজার টাকা বেতনের সঙ্গে ৩০ শতাংশও যদি বাড়ে তাহলে আমি মনে করি সেটি যৌক্তিক পর্যায়ে থাকবে।
গ্রেড কমাতে চান শ্রমিকপক্ষও। ৭টির স্থলে ৫টি গ্রেড করার যে প্রস্তাব দিতে যাচ্ছেন শ্রমিক নেতারা; সেখানে কত হবে সর্বনিম্ন মজুরি? সরাসরি উত্তর না মিললেও দাবির পক্ষে যুক্তি বিশ্লেষণে বোঝা যাচ্ছে, বর্তমানে ৫ম গ্রেডের শ্রমিকরা মোট যে বেতন পান তা দ্বিগুণের কিছুটা বেশি করে ন্যূনতম বেতন নির্ধারণের প্রস্তাব করবেন তারা। যা হতে পারে ২২ হাজার টাকার বেশি। বর্তমানে তারা বেতন পাচ্ছেন ১০ হাজার ৩৬০ টাকা।
তৈরি পোশাক খাতের নিম্নতম মজুরি বোর্ড-২০২৩ এর শ্রমিক প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন,
আমরা এবার গ্রেড পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে চাই। এখন ৭টি গ্রেড রয়েছে। এত অতিরিক্ত গ্রেডের তো প্রয়োজন নেই। এখানে কিছু ফাঁকফোকর রয়েছে, তাতে অধিক সংখ্যক শ্রমিক লাভবান হয়না। সেই ক্ষেত্রে সেই জায়গাটিকে কমিয়ে আনার চেষ্টা করেছি এবং আমরা এবার ৫ গ্রেডে উন্নীত করার প্রস্তাবনা দিব। তাছাড়া এখনই তো সর্বনিম্ন গ্রেডের কর্মীরা ১০ হাজার টাকা থেকে ১২ হাজার টাকা পান, তাহলে আমি দ্বিগুণ চাইবো না কেন?
রোববার (২২ অক্টোবর) নিম্নতম মজুরি বোর্ডে ওঠা দুই পক্ষের প্রস্তাব আমলে নিয়েই আগামী ৫ বছরের জন্য বেতন কাঠামো নির্ধারণ হবে। সেই কাঠামো চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে শ্রমিকদের যাপিতজীবনকে সহজ করার মতো শ্রমের মূল্য নির্ধারণের পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অনুধাবন করতে হবে যে, শ্রমিক না থাকলে কোনো কারখানা চলবে না, শ্রমিক না থাকলে কোনো উৎপাদন হবে না বা পণ্য রফতানি হবে না। সেই সঙ্গে আমদানি প্রতিস্থাপক শিল্প প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। সুতরাং, শ্রমিকরা যাতে একটি শোভন কর্ম পরিবেশে কাজ করতে পারেন, তারা যাতে একটি শোভন জীবনযাপন করতে পারেন, সেটি অনুযায়ী তাদের নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ করতে হবে।
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই মজুরি বৃদ্ধির সব প্রক্রিয়া শেষ করতে চায় শ্রমিক-মালিক দুইপক্ষই। যা কার্যকর হবে আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে।