বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার ১৪ নং নিয়ামতি ইউনিয়নে ভি জিএফ, ভিজিডি চাল চুরি আড়াল করতে ট্যাগ অফিসার ছাড়াই চাল বিতরণ। এমনকি মার্চ, এপ্রিল, মে ও জুন এই ৪ মাস নদীতে জেলেদের জাটকা ইলিশ ধরা নিষেধাজ্ঞা থাকায় তালিকাভুক্ত জেলেদের ভিজিএফের চাল বরাদ্দ দেয় সরকার। রবিবার (২৩ জুন) ও সোমবার (২৪ জুন) সকালে ইউনিয়ন পরিষদে ইউপি সদস্য আবুল কালাম ট্যাগ অফিসার ছাড়াই জেলেদের ভিজিএফের চাল বিতরণ করেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নিবন্ধনকৃত দরিদ্র জেলেদের জন্য প্রতি মাসে ৪০ কেজি চাল বরাদ্দ দেয় সরকার। চলতি বছরে ৪ মাসের জন্য নিয়ামতি ইউনিয়নের ১৫০ জন জেলেকে ৪০ কেজি করে চাল বিতরণ করার কথা থাকলেও দুই ধাপে দুই মাসের চাল একত্রে জনপ্রতি ৮০ কেজি না দিয়ে ৫০ কেজি করে দেয়া হয় । ট্যাগ অফিসারের অনুপস্থিতিতে প্রকাশ্যে অন্তত ৩০ কেজি করে চাল কম দেওয়া হয়েছে। চাল বিতরণের প্রথম থেকেই এই অভিযোগ করে আসছিল স্থানীয় জেলেরা। বরাদ্দের বাকি চাল লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির ও ইউপি সদস্য আবুল কালাম তালুকদারের বিরুদ্ধে। গত ৪ মাসে ১৫০ জন জেলেদের বরাদ্দের চাল মোট ২৪ টন হলেও সেখান থেকে জেলেদের চাল কম দিয়ে ৯ টন চাল আত্মসাৎ করেছে ইউপি সদস্য আবুল কালামকে সাথে নিয়ে চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির।
এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদে ২৪ জুন ট্যাগ অফিসারের অনুপস্থিতিতে ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় ২৬৬ জন দুস্থ অসহায় নারীকে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও তাদেরকে ২৭-২৮ কেজি চাল দেয়া হয় ।
দুস্থ নারীদের জন্য ৭ টন ৯৮০ কেজি চাল থেকেও প্রায় ৬ শত কেজি চাল আত্মসাৎ করেছে ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য।
২০ মে থেকে ২৩ জুলাই সমুদ্রে সকল ধরনের মাছ শিকার করা নিষিদ্ধ থাকায়,
নিয়ামতি ইউনিয়নের ১০ জন জেলেকে ৫৬ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হলেও ৫৬০ কেজি চাল পায়নি কোন জেলেরা। ঈদ-উল আযহা উপলক্ষে ১৪১২ জন ব্যক্তিকে বিশেষ ভিজিএফের ১৪ টন ১২০ কেজি চাল বরাদ্দ দেওয়া হলেও জনপ্রতি ৩-৪ কেজি করে কম দিয়ে এবং একাধিক ব্যক্তিকে চাল না দিয়ে প্রায় ২ টন চাল আত্মসাৎ করেছে ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির। এমনকি ঘূর্ণিঝড় বিমাল ও পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে বরিশাল ০৬ বাকেরগঞ্জ আসনের এমপি দেয়া ঈদ উপহারের চাল সাধারণ জনগণকে না দিয়ে গুদাম জাত করেন।
যা এখনো গুদামে রয়েছে ইতিপূর্বেও চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবিরের বিরুদ্ধে সরকারি বরাদ্দের চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও কোন ধরনের ব্যবস্থা নেয়নি উপজেলা প্রশাসন।
জেলেদের চাল ও অন্যান্য বরাদ্দের চাল বিতরণে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চেয়ে চেয়ারম্যান হুমায়ুন কোভিদ কে মুঠো ফুলে কল করা হলে তিনি ‘বরিশালে মিটিংয়ে রয়েছি, বাকেরগঞ্জে আসলে কথা হবে বলে জানান সংবাদ মাধ্যমকে।
এ বিষয়ে নিয়ামতি ইউনিয়নের দায়িত্ব প্রাপ্ত ট্যাগ অফিসার মাধ্যমিক একাডেমি কর্মকর্তা এনামুল হক সংবাদ মাধ্যমকে জানান ‘আমি ছুটিতে ছিলাম , আমাকে অবহিত না করে এবং আমার অনুপস্থিতিতে চাল বিতরণ করেন যা সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত এবং গতকালকে আমার কোন পরীক্ষার দায়িত্ব ছিল না
আমার অনুপস্থিতিতে কেন তারা চাল দিয়েছে তা আমার জানা নেই।
উপজেলা মৎস্য অফিসার মোঃ নাছির উদ্দিন জানান , ‘গত দুই দিনে আমার কাছে জেলেরা মুঠোফোনে একাধিক অভিযোগ করেছে। আমি বারবার ফোন করে চেয়ারম্যানকে সঠিক নিয়মে চাল বিতরণ করতে বলেছি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে অবহিত করেছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাইফুর রহমান জানায় ‘জেলে পরিবারের প্রতি সরকার যেই পরিমাণে চাল বরাদ্দ দিয়েছে তাই বিরতণ করতে হবে। সরকারি কোনো বরাদ্দের চাল কম দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তদন্ত করে ব্যব গ্রহণ করা হবে।