স্মার্টফোন এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের নিত্যসঙ্গী। একইসঙ্গে ফোনের ক্ষমতাও দিন দিন বাড়ার পাশাপাশি নতুন নতুন প্রযুক্তি যুক্ত হচ্ছে। ফলে ফোনেই ব্যক্তিগত কাজের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিভিন্ন কাজ করার সুযোগ মিলে থাকে। যোগাযোগ, ছবি তোলা, ক্লাউডে তথ্য সংরক্ষণ, ইন্টারনেট ব্রাউজিং ছাড়াও স্মার্টফোন পাওয়ার ব্যাংক হিসেবেও ব্যবহার করা হচ্ছে। বাজারে এখন নানা রকম স্মার্টফোন কিনতে পাওয়া যায় বলে ফোন কেনার সিদ্ধান্ত নেয়াটা কঠিন। বাজারে অত্যাধুনিক ফিচারের ফোনগুলো তা আরও কঠিন করে তুলেছে।
তাহলে এবার জেনে নেয়া যাক ফোন কেনার আগে কোন বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।
ডিসপ্লে
ফোনের ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে ফোনের ডিসপ্লের আকার ও রেজুলেশন ঠিক করতে হবে। যারা ভিডিও স্ট্রিমিং, ছবি সম্পাদনা, ভিডিও বা মুভি দেখেন তারা সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় ইঞ্চি ডিসপ্লের ফুল এইচডি বা কিউএইচডি ডিসপ্লের ফোন নিতে পারেন। এর চেয়ে বড় মাপের ফোন নিলে বহন করতে সমস্যা হবে।
যারা সাধারণত ইন্টারনেট ব্রাউজিং, চ্যাটিং কিংবা ই-মেইল, ফেসবুক চালানোর মতো কাজে স্মার্টফোন ব্যবহার করবেন, তারা পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ ইঞ্চি মাপের এইচডি বা ফুল এইচডি ডিসপ্লের ফোন নিতে পারেন।
প্রসেসর
নতুন ফোন কেনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় প্রসেসর। নতুন ফোন কেনার আগে আপনাকে প্রথমে ফোনের প্রসেসর বুঝতে হবে। কারণ মোবাইল ফোন দ্রুত চলে, হ্যাং হয় না, ফোন গরম থাকে এবং চার্জিং টাইম দীর্ঘ হয়, এগুলো অনেকাংশে মোবাইল ফোনের প্রসেসরের ওপর নির্ভর করে। প্রসেসর ফোনের মাদারবোর্ডে একটি ছোট চিপ যা ফোনের বিভিন্ন ছোট-বড় কাজ সম্পাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি ফোনের মস্তিষ্কের মতো, ফোনকে বিভিন্ন ছোট ছোট কাজ সম্পন্ন করতে সাহায্য করে।
আপনি যদি স্মার্টফোনে ছবি বা ভিডিও সম্পাদনা, ডকুমেন্ট সম্পাদনা, ভারি গেম খেলা, ভিডিও স্ট্রিমিং ও স্ক্রিনে একাধিক অ্যাপ ব্যবহার করেন তাহলে নিঃসন্দেহে আপনার একটি ভালো প্রসেসরের প্রয়োজন হবে। এতে মাল্টিটাস্কিং-সুবিধা পাওয়া যায়। আর যারা স্মার্টফোন হালকা কাজে ব্যবহার করেন তাদের ভালো প্রসেসর না হলেও চলে।
ক্যামেরা
ফোনে বেশি মেগাপিক্সেল থাকা মানেই কিন্তু সে ফোনের ক্যামেরা ভালো নয়। ক্যামেরার অ্যাপারচার, আইএসও, পিক্সেলের আকার ও অটোফোকাসের মতো বিষয়গুলোও গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত দেখা যায় ৫০ মেগাপিক্সেল ক্যামেরাতেও খুব ভাল ছবি উঠছে না। অনেক সস্তা মোবাইলেও এই ক্যামেরা থাকে। আবার আইফোনের মতো একটি প্রিমিয়াম ফোনে, মাত্র ১২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা দেয়া হয়। অথচ তার ছবির মান অনেক ভালো। এর কারণ হলো ক্যামেরার অন্য উপাদান।
যেমন- সেন্সরের আকার, পিক্সেলের আকার, অ্যাপারচার, ইমেজ সিগন্যাল প্রসেসর, অপটিক্যাল ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন, এইচডিআর, লেন্সের গুণমান। আপনি যদি ভালো ক্যামেরা ফোন চান তাহলে আপনাকে এসব যাচাই করেই ফোন কিনতে হবে।
ব্যাটারি
ব্যাটারির শক্তি নির্ধারিত হয় মোবাইল ফোনটি কেমন তার ওপর ভিত্তি করে। তবে বড় মাপের স্ক্রিনের মোবাইল বেশি ব্যাটারি শক্তি ক্ষয় করে। তাই শক্তিশালী ব্যাটারি প্রয়োজন হবে মোবাইলটি অনেক সময় ধরে চালু রাখার জন্য। তাই ফোন কেনার আগে ব্যাটারির দিকটিও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া উচিত গ্রাহকের। পাঁচ হাজার মমিলিঅ্যাম্পিয়ারের ব্যাটারি হলে ভালো হয়।
অপারেটিং সিস্টেম
এখনকার স্মার্টফোন কেনার আগে অপারেটিং সিস্টেমের সংস্করণ ও ইউজার ইন্টারফেসের বিষয়টি বিবেচনায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু ইউজার ইন্টাফেস ব্যবহার করে বারবার কাজ করা হয়, তাই এটি যত সহজ ও সাধারণ হয় ততই ভালো। নিখুঁত অ্যান্ড্রয়েডের অভিজ্ঞতা পেতে মটোরোলা, নেক্সাস/পিক্সেল, অ্যান্ড্রয়েড ওয়ানচালিত ডিভাইসগুলো ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া জেনইউআই, এক্সপেরিয়া ইউআই, স্যামসাং টাচউইজ, ইএমইউআইয়ের মতো ইন্টারফেসগুলোও ব্যবহারবান্ধব।
নিরাপত্তা
এখনকার বেশির ভাগ ফোনেই বাড়তি নিরাপত্তা ফিচার থাকে। যেমন ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আইরিশ সেন্সর। এসব ফিচার কেবল ফোন লক-আনলকের কাজেই নয়, বরং নির্দিষ্ট ফাইলে পাসওয়ার্ড দিতেও ব্যবহার করা যায়। এখনও আইরিশ স্ক্যানারের ফোন ততটা সহজলভ্য নয় বলে অন্তত বাড়তি নিরাপত্তা ফিচার আছে এমন ফোনগুলো দেখতে পারেন।
স্পিকার
এখনকার ফোন কেনার আগে অবশ্যই অডিওর মান দেখে নেবেন। কারণ, যারা ভিডিও কনফারেন্স বা ভিডিও স্ট্রিমিং করেন, তাদের জন্য অডিওর মান ভালো হওয়া দরকার। যারা চলতি পথে বিনোদন পছন্দ করেন তারা সামনের দিকে স্পিকারযুক্ত ফোন কিনতে পারেন। যারা সাধারণ কাজে ফোন ব্যবহার করবেন তাদের জন্য পেছনে স্পিকারযুক্ত স্মার্টফোন কিনলেও সমস্যা নেই।
দাম ও বাজেট
স্মার্টফোন কেনার আগেই আপনার বাজেট ঠিক করে ফেলুন। এবার যে ফোনটি কিনতে চান সেটির দাম সম্পর্কে জেনে নিন। দামের সঙ্গে অবশ্যই আপস করবেন তবে সেটা ফোনের কেমন ফিচার পাচ্ছেন তা জেনে। অর্থাৎ আপনি যে স্মার্টফোনটি কিনতে চাচ্ছেন সেটির ফিচার ভালো হলে বাজেটের বাইরে গিয়ে তা কিনতে পারেন। বাজেট কম হলে হয়তো স্মার্টফোনে লেটেস্ট সব টেকনোলজি কিংবা সব ফিচার পাবেন না।