গতকালই রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে পাকিস্তানকে ২ উইকেটে হারিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল নিশ্চিত করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এখন ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ পাওয়ার অপেক্ষায়। আগামী বছর জুনে লর্ডসের ফাইনালে বাকি স্থানের জন্য এই মুহূর্তে হাই স্কোরিং ম্যাচে শেষ ৬ ওভারে বরিশালের প্রয়োজন ছিল ৭৮ রান, হাতে ৪ উইকেট। তাসকিন আহমেদ-রায়ান বার্লদের দাপটে তখন অনেকটাই দিশেহারা। চাপ সামলে এই অবস্থান থেকে জয় তুলে নেয়ার ঘটনা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে খুব কমই দেখা গেছে। তবে সেই প্রায় অসম্ভব কাজকে সম্ভব করলেন ৩৮ বছরের বুড়ো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তাকে সঙ্গ দিয়েছেন পাকিস্তানের ফাহিম আশরাফ। দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে অবিশ্বাস্য জয় তুলে নিয়েছে বরিশাল।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) বিপিএলের একাদশ আসরের প্রথম ম্যাচে দুর্বার রাজশাহীকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে বরিশাল।
টস হেরে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ওভার শেষে ৩ উইকেটে ১৯৭ রান করে রাজশাহী। জবাব দিতে নেমে বল হাতে রেখে জয় ছিনিয়ে নেয় বরিশাল। রাজশাহীর হয়ে ৪৭ বলে ৯৪ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন ইয়াসির আলী রাব্বি। ৫১ বলে ৬৫ রান করেছেন এনামুল হক বিজয়। বরিশালের হয়ে ম্যাচজয়ী ৫৬ রানের ইনিংস খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ। ফাহিম আশরাফের ব্যাট থেকে এসেছে ৫৪ রান।
রাজশাহীর দেয়া বড় লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা একদ্মই ভালো হয়নি বরিশালের। ইনিংসের প্রথম বলেই এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফেরেন নাজমুল হোসেন শান্ত। দ্বিতীয় ওভারে দলীয় ১২ রানে ফেরেন তামিম ইকবাল। চতুর্থ ওভারে আউট হন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান তারকা কাইল মেয়ার্সও।
বিপর্যয় সামাল দিতে এসে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি মুশফিকুর রহিমও। দলীয় ৫১ রানে ফেরেন হাসান মুরাদের শিকার হয়ে। শুরুটা ভালো করেও ইনিংস বড় করতে পারেননি তাওহীদ হৃদয়। দলকে বিপদে ফেলে ৬১ রানের মাথায় আউট হন তিনিও।
হৃদয়ের আউটে বরিশালের জয়ের সমীকরণ অসম্ভবপ্রায় হয়ে দাঁড়ায়। কারণ ৭৭ বলে তখন তামিমদের প্রয়োজন ছিল ১৩৭ রান অর্থাৎ ওভারপ্রতি ১২ রানেরও বেশি। অসম্ভব এই সমীকরণ মেলাতে মাহমুদউল্লাহকে সঙ্গ দিতে ৭ নম্বরে ব্যাটিংয়ে আসেন শাহিন আফ্রিদি।
রানের চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগ্রাসী হতে শুরু করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বোলিং অলরাউন্ডার হয়েও তাকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন শাহিন আফ্রিদি। রিয়াদের সঙ্গে তার ৫১ রানের জুটি ম্যাচে টিকিয়ে রেখেছে বরিশালকে। ১৭ বলে ২৭ রান করে তাসকিন আহমেদের বলে বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন আফ্রিদি।
আফ্রিদির বিদায়ের পর উইকেটে আসেন ফাহিম আশরাফ। শুরুতে বেশকিছু বল সময় নিয়ে ধীরে ধীরে বিধ্বংসী রূপ ধারণ করেন তিনি। মাহমুদউল্লাহও ব্যাট চালিয়েছেন দারুণভাবে। একের পর এক চার-ছক্কায় প্রতিপক্ষ বোলারদের রীতিমতো দিশেহারা করে ফেলেন তারা।
সপ্তম উইকেট জুটিতে ৩৫ বলে ৮৮ রান করেছেন রিয়াদ-আশরাফ। বিধ্বংসী এই জুটি প্রায় অসম্ভব জয়কে শেষমেশ সহজ জয়ের রূপ দিয়েছে।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা একদমই ভালো হয়নি রাজশাহীর। দলীয় ২৫ রানের মাথায় ২ ওপেনারকে হারায় নবাগত দলটি। পাকিস্তানের তারকা ব্যাটার মোহাম্মদ হারিস এবং এনসিএল কাঁপানো জিশান ইসলামকে একাই সাজঘরে ফেরান কাইল মেয়ার্স।
তৃতীয় উইকেটে হাল ধরেন অধিনায়ক এনামুল হক বিজয় এবং ইয়াসির আলী রাব্বি। শুরুর দিকে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে চাপ কাটিয়ে দলকে খেলায় ফেরান বিজয়। সেট হয়ে বিধ্বংসী রূপ ধারণ করেন ইয়াসিরও।
৪২ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন এনামুল। তবে অপরপ্রান্তে রাব্বি অর্ধশতক তুলে নেন অধিনায়কের চেয়ে দ্রুতগতিতে। ৩৫ বলে ৫০ পূর্ণ করেন তিনি। এরপর এই জুটির দুই ব্যাটারই বাউন্ডারির পসরা সাজিয়ে বসেন। ফাহিম আশরাফের ওভারে মুশফিককে ক্যাচ দিয়ে ৫১ বলে ৫ ছয় ও ৪ চারে ৬৫ রানে শেষ হয় এনামুলের ইনিংস।
রিপন মণ্ডলকে যন্ত্রণা উপহার দেয়া ইয়াসিরের ইনিংস ৯৪ রানের, শেষ পর্যন্ত অপরাজিতই থাকেন তিনি। চারের (৭) চেয়ে মেরেছেন বেশি ছয় (৮)। রায়ান বার্ল ৮ বলে করেন ৯ রান। ৪ ওভারে ৫৫ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকেন রিপন। শেষ দুই ওভারে তিনি দেন ৩৫ রান।