বরিশাল:-বরিশাল শহরে ফেয়ার হেলথ ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় হাফসা আক্তার রুপা (২৫) নামে এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের দাবি, রোগী ও তাদের স্বজনদের খামখেয়ালির কারণে মৃত্যু হয়েছে।
জানা গেছে, পেটে ব্যথা নিয়ে গত ১৫ মে নগরীর কালি বাড়ি রোডের ফেয়ার হেলথ ক্লিনিকে ডাক্তার দেখাতে যান পার্শ্ববর্তী নতুন বাজার গুপ্ত কর্নার এলাকার নাসিমা বেগমের মেয়ে রুপা। সেখানে ১ হাজার টাকা ভিজিট দিয়ে গাইনি ডাক্তার হাসিনা মর্তুজাকে দেখায় তার পরিবার। পরে চিকিৎসক হাসিনা মর্তুজা রোগীর পেটে ওভারিয়ান টিউমার হয়েছে বলে অপারেশন করার কথা জানায়। তার কথা অনুযায়ী ২৫ হাজার টাকা জমা দিয়ে একই মাসের ২২ মে অপারেশন করায় রুপার পরিবার। এর ৪-৫ দিন পর রুপাকে বাসায় নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু বাসায় নেওয়ার পর থেকে কোনো কিছুই খেতে পারতেন না রুপা। বিষয়টি চিকিৎসক হাসিনা মর্তুজাকে জানালে তিনি ক্লিনিকে নিয়ে যেতে বলে।
এরপর পর্যায়ক্রমে দুই এক দিন পর রুপাকে ক্লিনিকে নিয়ে চিকিৎসা দেয় হাসিনা মর্তুজা। এর প্রতিবারই এক হাজার টাকা করে ১৮ বারে ১৮ হাজার টাকা ভিজিট নেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের হাজার হাজার টাকার টেস্ট করায় বলে অভিযোগ করেন রুপার মা নাসিমা বেগম। প্রতিটি টেস্টই তাদের ওখানেই করাতে বাধ্য করা হয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
নাসিমা বেগম অভিযোগ করে বলেন, এভাবে বেশ কিছুদিন চিকিৎসা শেষে চিকিৎসক হাসিনা মর্তুজা গত জুলাই মাসে রুপাকে পেটের নারীতে পেচ পড়েছে জানিয়ে ওই ক্লিনিকের মালিক সার্জারি চিকিৎসক জহিরুল হক মানিকের কাছে রেফার করেন। তখন মানিক রুপাকে আবার ক্লিনিকে ভর্তি করে অপারেশন করার কথা জানান। সার্জারি চিকিৎসক মানিক রুপার মা-বাবার কাছে অপারেশনের জন্য নতুন করে ৬৫ হাজার টাকা ও আগের অপারেশনে কোন ত্রুটি থাকলে তা নিরাময়ের জন্য আরও ১০ হাজার টাকাসহ ক্লিনিকের খরচ ব্যাবদ মোট এক লাখ টাকা দাবি করেন। এছাড়াও তার মালিকানাধীন অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসা করালে ৪৫ হাজার টাকা লাগবে বলেও জানান।
রুপার মা আরও জানান, এর আগে চিকিৎসা ব্যাবদ ধার দেনা করে ৭৫ হাজার টাকা খরচ করেছেন তারা। পরে চিকিৎসার জন্য অন্য হাসপাতালে যেতে চাইলেও তারা যেতে দেয়নি। অথচ দীর্ঘদিনেও ফেয়ার হেলথ ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ কোনো রোগ নির্ণয় করতে পারেনি। সবশেষ চলতি মাসের ১০ তারিখ রাতে রুপা পেট ফুলে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এসময় তাকে ফেয়ার হেলথ ক্লিনিকে নিয়ে গেলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তাদের ওখানে ঢুকতে না দিয়ে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। সেসময় হাসপাতালে যাওয়ার পথে রাত ১০ টায় রুপা মারা যায়।
চোখের সামনে মেয়ের মৃত্যুর পর থেকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যরা। তারা ফেয়ার হেলথ ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের ভুল চিকিৎসার কারণে মেয়েকে হারিয়েছেন বলে জানান। তারা ভুল চিকিৎসার জন্য দায়ীদের শাস্তি দাবি করছেন।
এ বিষয়ে ফেয়ার হেলথ ক্লিনিকের গাইনি চিকিৎসক হাসিনা মর্তুজা বলেন, দুই মাসে আগে অপারেশন হয়েছে। পরে তাকে সার্জারি চিকিৎসক জহিরুল হক মানিকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তার সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
ফেয়ার হেলথ ক্লিনিকের মালিক সার্জারি চিকিৎসক জহিরুল হক মানিক বলেন, তারা নিজেদের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছে। তারা গরীব দেখে অনেক কম খরচে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত কোনো টাকা চাওয়া হয়নি।
হাসিনা মর্তুজা কোন ভুল চিকিৎসা দিয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান ও ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান।
এদিকে চিকিৎসক হাসিনা মর্তুজা ফেয়ার হেলথ ক্লিনিকের মালিক জহিরুল হক মানিকের শ্যালিকা বলে জানা গেছে। এছাড়াও ওই ক্লিনিকের বিভিন্ন বিভাগে তার আত্মীয় স্বজনদের দিয়ে কাজ করান বলে জানা গেছে।