সম্প্রতি বিদ্যালয়গুলোতে যেসব ধর্মীয় উসকানির ঘটনা ঘটছে তা কোনোভাবেই কাম্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি। তিনি বলেন, কারা কী উদ্দেশ্যে এগুলো করছে তা খতিয়ে দেখছে সরকার।
ধর্মীয় উসকানির সাম্প্রতিক ঘটনাকে ‘দুঃখজনক’ মন্তব্য করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সাম্প্রদায়িক অপশক্তি যারা, তারা কোনোভাবেই চায় না সম্প্রীতি অটুট থাকুক, সম্প্রীতির বাংলাদেশ এগিয়ে যাক, দেশে শান্তি বিরাজ করুক, তাই তারা এসব করছে।
শনিবার (০৯ এপ্রিল) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সম্প্রতি মুন্সীগঞ্জে হৃদয় মণ্ডল নামে এক বিজ্ঞান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ওঠে। পরে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও ধর্মীয় গ্রন্থের অবমাননার অভিযোগ এনে মামলা করেন একই স্কুলের অফিস সহকারী মো. আসাদ মিয়া। এরপর শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়।
পুরো ঘটনাটি নিয়ে নিজের অভিমত তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমার কাছে এটা মনে হচ্ছে যে আমাদের আশপাশের অনেক দেশে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বাংলাদেশ শান্তিতে আছে এই শান্তিটা কারও কারও হয়তো পছন্দ হচ্ছে না।
সবাইকে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমাদের ধৈর্য ধরার প্রয়োজন রয়েছে। যে কোনো সময়, যে কোনো ছুঁতায় আমাদের শান্তি-শৃঙ্খলা, আমাদের সম্প্রীতি নষ্ট করা ও সেগুলো উসকে দেওয়া কোনোভাবেই উচিত নয়।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের মুক্তির বিষয়ে কী করা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়টি নিরসনে আমাদের দিক থেকে যা করণীয় সে চেষ্টাটি আমরা করব।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের এগিয়ে যাবার জন্য ধর্মীয় সম্প্রীতি ধরে রাখা দরকার একইসঙ্গে আমাদের শিক্ষকদের নিরাপত্তা দরকার। আমাদের বিজ্ঞান প্রযুক্তি নিয়েও এগিয়ে যেতে হবে। সেখানে শিক্ষকের মর্যাদা ও নিরাপত্তার দিকও আমার দেখতে হবে। শিক্ষায় এগিয়ে যেতে হলে শিক্ষকের সামাজিক এবং আর্থিক নিরাপত্তাও দিতে হবে।
কাউকে হয়রানি করার বিষয়ে সতর্ক করে দীপু মনি বলেন, কোনোভাবেই যেন কেউ হয়রানির শিকার না হয়। যে কোনো ধরনের অভিযোগ আসতেই পারে। অভিযোগ এলে তদন্ত হবে। কিন্তু কেউ যেন অযথা হয়রানির শিকার না হয়। ধর্ম ব্যক্তিগত বিষয়। ধর্মীয় বোধ আমি আমার মতো করে ধর্মকে পালন করব। যে যার ধর্ম পালন করবে, তার বিশ্বাস নিয়ে। সেটাই তার অধিকার।
শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের ঘটনার সঙ্গে আরও কিছু বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, এর মধ্যে অনেকগুলো বিষয় ঘটেছে। আমরা পত্রপত্রিকায় দেখছি। সেখানে নানা ধরনের সমস্যা সংকট, একজনের সঙ্গে আরেকজনের সমস্যা, সেগুলো ব্যক্তি পর্যায়ের, সেগুলো দেখছি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একজন শিক্ষক তিনি বিজ্ঞান পড়াবেন। আমরাতো বিজ্ঞান বিবর্জিত হতে পারি না। তবে আমাদের সকলের জীবনে ধর্ম একটি বড় ভূমিকা পালন করে। ধর্মটা যার যার ব্যক্তিগত বিষয়। ধর্ম শিক্ষার ক্লাস হলে সেখানে ধর্ম শেখাবে। বিজ্ঞানের সঙ্গে ধর্মের সংঘর্ষের জায়গা নেই। যদি কোথাও সংঘর্ষ হয় তাহলে সেখানে আমি কোনও মন্তব্য করতে পারি না। কিন্তু একজন শিক্ষক হয়রানির মধ্যে পড়া উচিত নয়।
এদিকে, এ ঘটনার কয়েকদিন না যেতেই নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার একটি স্কুলে হিজাব পরে স্কুলে যাওয়ার কারণে বেশ কয়েকজন ছাত্রীকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে ওই স্কুলের নারী শিক্ষিক আমোদিনী পালের বিরুদ্ধে। যদিও আমোদিনী পাল জানিয়েছেন, স্কুল ড্রেস না পরে আসার কারণেই তাদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। সেখানে ধর্মীয় কোনও বিষয় ছিল না। কিন্তু একশ্রেণির মানুষ বিষয়টিতে ধর্মীয় রং লাগাচ্ছে।
এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে, উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগযোগমাধ্যম।