রমজান মানেই রোজাদারদের জন্য বিশেষ এক পরীক্ষা। এ পরীক্ষা যেমন মহান সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহ লাভের, ঠিক তেমনি সুস্থ সবল দেহে পরিপূর্ণভাবে সব আমল ও ইবাদত সম্পন্ন করার। সেই আমল ও ইবাদত পালন করার সময় আমাদের কিছু ভুল ধারণা আছে। বিশেষ করে করোনার টিকা ও ইনসুলিন নেওয়ার ক্ষেত্রে।
ইসলামি শিক্ষাবিদ এবং যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ বলছে, রমজানের সময়ে রোজা থাকলেও মুসলমানদের টিকা নেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত হবে না।
বাংলাদেশের ইসলামিক ফাউন্ডেশনও গত ১৪ মার্চ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভা কক্ষে দেশের জ্যেষ্ঠ আলেমদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর জানিয়েছে, রোজা রেখে করোনাভাইরাসের টিকা নিতে কোনো সমস্যা নেই।
আলোচনায় উপস্থিত আলেম সমাজ একমত পোষণ করেছেন, যেহেতু করোনাভাইরাসের টিকা মাংসপেশিতে গ্রহণ করা হয় এবং তা সরাসরি খাদ্যনালী বা পাকস্থলীতে প্রবেশ করে না, সেহেতু রমজান মাসে রোজাদার ব্যক্তি দিনের বেলায় শরীরে টিকা গ্রহণ করলে রোজা ভঙ্গ হবে না।
তারপরও আমরা অনেকেই মনে করি, রোজা রেখে করোনার টিকা ও ইনসুলিন গ্রহণ করা যাবে না। আসলে বিষয়টি ঠিক নয়। কেনো ঠিক নয় সে বিষয়েই ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমির সহকারী পরিচালক, মোস্তাফিজুর রহমান আমাদের আলোকপাত করছেন। চলুন শুনে নেই তার মুখেই-
রোজা রেখে টিকা নেওয়া যাবে কিনা?
আমরা জানি যে, গত দুই বছর কোভিড পরিস্থিতির কারণে সারা বিশ্বই থমকে গিয়েছিল। আল্লাহর অশেষ রহমতে এ বছর আমরা রমজানে রোজা ও আমল করার সুযোগ পেয়েছি। আমরা তারাবির নামাজ পড়তে পারছি, বিভিন্ন ইবাদত-বন্দেগিও করতে পারছি। আমরা আস্তে আস্তে আমাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছি।
তবে তারপরও আমাদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। অনেকেই টিকা গ্রহণ করেছেন আবার অনেকেই এখনো টিকা গ্রহণ করা থেকে বিরত আছেন। কেউ কেউ টিকার মেসেজ পাওয়ার পরও টিকা গ্রহণ করছেন না। তাদের মনের মধ্যে সন্দেহ ও সংশয় কাজ করছে যে, রোজা রেখে টিকা দিলে রোজা ভেঙে যেতে পারে কিনা!
এ বিষয়ে সারা বিশ্বের ইসলামি স্কলার ও শিক্ষাবিদ যারা আছেন তারা প্রত্যেকে একমত যে, রমজানে রোজা রেখে টিকা দিলে বা টিকা গ্রহণ করলে রোজা ভাঙবে না। কারণ রোজা ভাঙার যে মৌলিক বিষয় রয়েছে তা করোনার টিকা গ্রহণ করলে বা ইনসুলিন নিলে সমস্যা হবে না। মানুষের পাকস্থলী বা মস্তিষ্কে যদি সরাসরি কোনো খাদ্যদ্রব্য বা ওষুধ প্রবেশ করে তবেই রোজা ভেঙে যাবে। কিন্তু করোনার টিকাটা দেওয়া হচ্ছে আমাদের চামড়ার নিচের মাংশপেশিতে। যা সরাসরি আমাদের পাকস্থলী বা মস্তিষ্কে যাচ্ছে না। যার ফলে রোজা ভাঙবে না।
অনেকের কাছে টিকার মেসেজ আসছে। অথচ তারা টিকা গ্রহণ করছেন না। এক্ষেত্রে তারা অসুস্থ হয়ে যাওয়ার ভয় পাচ্ছেন। যার ফলে রোজা রাখতে তাদের কষ্ট হবে। কিন্তু তাদের উচিত টিকা গ্রহণ করে ফেলা। কেননা, যদি টিকা গ্রহণ না করায় আপনি কোভিডে আক্রান্ত হয়ে পড়েন তাহলে তো আপনি রোজা রাখতেই পারবেন না। তারচেয়ে একটু কষ্ট হলেও করোনার টিকার মেসেজ আসলে টিকা গ্রহণ করে ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
করোনার টিকার মতো ইনসুলিন নেওয়ার ক্ষেত্রেও রোজা ভাঙবে কিনা?
রমজানের সময় ডায়াবেটিস মাপা ও ইনসুলিন নেওয়া নিয়ে অনেক মুসলমানের মধ্যে সংশয় রয়েছে। অনেকে বিশ্বাস করেন, এ সময় ইনসুলিন নিলে তাদের রোজা ভেঙে যাবে। কিন্তু এটা একেবারেই তা নয়, কারণ এর মাধ্যমে আসলে শরীরে কোনো খাবার প্রবেশ করছে না।
করোনার টিকার মতোই ইনজেকশন নেওয়ার ক্ষেত্রেও একই মাসালা। যারা ডায়াবেটিস রোগী তারা অনেকেই ইনসুলিন নিয়ে থাকেন। তারাও রোজা রেখে ইনসুলিন নিতে পারবেন। এতে কোনো সন্দেহ নেই। কেননা, ইনসুলিনও টিকার মতো আমাদের পাকস্থলী বা মস্তিষ্কে প্রবেশ করছে না। ফলে রোজা রেখে ইনসুলিন নেওয়া যাবে এবং ডায়বেটিসও পরিমাপ করা যাবে।
আমরা রমজানে রোজা রেখে কোনো সন্দেহ ছাড়া টিকা, ইনজেকশন বা ইনসুলিন গ্রহণ করতে পারব। এতে রোজা ভাঙবে না। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের তৌফিক দান করুক।