ইউক্রেনের সাম্প্রতিক অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে গর্ভপাত বড়ি, জরুরি গর্ভনিরোধক ও এইচআইভি ওষুধ পাঠাচ্ছে দাতব্য গোষ্ঠী ও মানবাধিকারকর্মীরা। সেখানে বেসামরিক নারীদের রুশ সেনারা ধর্ষণ করছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। লন্ডনভিত্তিক আইনিউজ এমন খবর দিয়েছে।
প্রতিবেশী দেশটিতে বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিরোধের মুখে পড়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। সেখানে কোনো অঞ্চল থেকে রুশ সেনারা পিছু হটলে নারী ও শিশুরা যৌননির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলেও খবর আসছে।
এর আগে বন্দুকের নলের মুখে নারীদের ধর্ষণ করছে রাশিয়ার সেনারা বলে অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। আর বুচা শহরে রাশিয়ার সেনাদের ৫০টি যৌন সহিংসতার ঘটনার তদন্ত করছে ইউক্রেনের মানবাধিকার ন্যায়পাল লিউমিলা ডেনিসোভা।
শহরটির আঞ্চলিক প্রধান কৌঁসুলি অভিযোগ করেন, এখন পর্যন্ত ৬০০ মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। লিউমিলা ডেনিসোভা বলেন, ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করেছে রাশিয়ার সেনারা। বর্তমানে সে অন্তঃসত্ত্বা।
আইনিউজের খবরে বলা হয়, বুচা শহরে রাশিয়ার বাহিনী হাতে ২৫ নারী ও কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। যাদের মধ্যে ১৪ বছর বয়সী একটি শিশু রয়েছে।
ইউক্রেনের মানবাধিকার ন্যায়পাল বলেন, ক্রেমলিনের বাহিনীর দখলে থাকা একটি বাড়ির ভূগর্ভস্থ কুঠুরিতে নারীদের আটকে রেখে বারবার ধর্ষণ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৯ জন এখন অন্তঃসত্ত্বা।
গর্ভপাত প্রতিরোধের আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, বুচা শহর থেকে রাশিয়ার বাহিনী সরে যাওয়ার পর ইউক্রেনের বিভিন্ন হাসপাতাল, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও ক্লিনিক থেকে জরুরিভিত্তিক গর্ভনিরোধক এবং গর্ভপাতের সেবা চেয়ে অনুরোধ এসেছে।
অলাভজনক সংস্থা উইমেন হেল্প উইমেনের নির্বাহী পরিচালক কিনগা জেলিনসকা বলেন, আক্রান্ত নারীদের অনুরোধে পোল্যান্ডে গর্ভনিরোধক বড়ি মিফেপরিস্টোন ও মিসোপ্রোস্টল পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসার জন্য তাদের বিদেশ ভ্রমণেরও সহায়তা করা হয়েছে।
ইউক্রেনের মুক্ত এলাকায় সম্প্রতি ওষুধ পাঠাচ্ছে তার সংস্থা। তিনি বলেন, আমরা ইউক্রেনে যৌন সহিংসতা ও হামলার খবর শুনেছি। রাশিয়ার দখলদারিত্ব চলছে এমন এলাকাগুলোতে কাজ করা সম্মুখসারির গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে আমরা এসব খবর পাচ্ছি। এছাড়া বিভিন্ন নারীবাদী সংস্থাও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
কিনগা জেলিনসকা বলেন, যৌনসহিংসতা সংশ্লিষ্ট ওষুধ, জরুরি গর্ভনিরোধক, গর্ভপাত বড়ি ও এইচআইভির প্রোফিল্যাক্সিসের ঘাটতি দেখা গেছে ওইসব এলাকায়। এসব পণ্য সরবরাহ করতে আন্তর্জাতিক সংস্থা ও মিত্রদের কাছে তারা আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ সম্মুখসারিতে তাদের এগুলো দরকার।
আন্তর্জাতিক টেলিমেডিসিন সেবা উইমেন অন ওয়েবের পরিচালক ভেন্নি আলা-সিউরুয়া বলেন, আমাদের সংস্থার কাছেও বহু অনুরোধ এসেছে। ইউক্রেনে যাদের প্রয়োজন, তাদের কাছে আমরা গর্ভপাত বড়ি পাঠিয়েছি। দেশটিতে ওষুধের ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে, গর্ভপাত বড়ির। যেসব এলাকা সম্প্রতি রুশ বাহিনী দখল করে রেখেছিল, সেসব এলাকায় চিকিৎসা সেবার অভাব রয়েছে।
ইউক্রেন থেকে পোল্যান্ডে পালিয়ে আসা অন্তঃসত্ত্বা শরণার্থীদের আরও সমস্যায় পড়তে হয়েছে। নিরাপদ গর্ভপাতের জন্য তাদের আরেক লড়াই করতে হচ্ছে। গত মাসে দেশটিতে ধর্ষণ ও মায়েদের জীবন ঝুঁকির ঘটনা ছাড়া গর্ভপাত প্রায় নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এসব কারণে পোল্যান্ডে নারীদের গর্ভপাত করা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে।
দেশটিতে ধর্ষণের শিকার হওয়া কোনো নারীকে গর্ভপাত করতে হলে প্রথম একটি সরকারি ফৌজদারি তদন্ত হতে হবে। সেখানে যদি প্রমাণিত হয় কোনো নারী ধর্ষণের শিকার, তখনই কেবল তিনি গর্ভপাতের সুযোগ পাবেন।