ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তিনটি ওয়ার্ড ডেঙ্গু সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
প্রাক মৌসুম এডিস সার্ভের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। তবে উত্তর সিটির কোনো ওয়ার্ড উচ্চ ঝুঁকিতে নেই।
বুধবার (২৬ এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা কর্তৃক আয়োজিত জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় ‘প্রাক মৌসুম এডিস সার্ভে-২০২২’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। ডিএসসিসির ওই তিনটি ওয়ার্ড হলো ৩৮, ৪০ ও ৪৫।
আগের বছরের তুলনায় এবার রাজধানীতে ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে এমন পাত্র এবং সম্ভাব্য প্রজননস্থলের সংখ্যা বেড়েছে।
এই মশার লার্ভা বেশি রয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মহাখালী, গুলশান, লালমাটিয়া ও মোহাম্মদপুর এবং দক্ষিণ সিটির নবাবপুর, দয়াগঞ্জ ও ডিস্টিলারি রোড এলাকায়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার প্রাক বর্ষা এডিস জরিপে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার আওতাধীন জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কীটতাত্ত্বিক দল গত ২৪ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল এই জরিপ চালায়। ঢাকার দুই সিটির মোট ৯৮টি ওয়ার্ডের ৩ হাজার ১৫০টি বাড়িতে জরিপ পরিচালিত হয়।
প্রাক বর্ষা এই জরিপের ফলাফল আজ বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের পুরোনো ভবন মিলনায়তনে প্রকাশ করা হয়।
মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের সূচক ‘ব্রুটো ইনডেক্স‘ নামে পরিচিত। জরিপ বলছে, ২৩টি ওয়ার্ডে ‘ব্রুটো ইনডেক্স’ ১০-এর বেশি। এর অর্থ হচ্ছে, এসব এলাকার ১০০টির মধ্যে ১০টি পাত্রে এডিস মশা বা লার্ভা পাওয়া গেছে। আর ২০-এর বেশি ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তিনটি ওয়ার্ডে।
সর্বোচ্চ ব্রুটো ইনডেক্স ২৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ পাওয়া গেছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে (ডিস্টিলারি রোড)। ব্রুটো ইনডেক্স ২০ শতাংশ পাওয়া গেছে নবাবপুর ও দয়াগঞ্জ এলাকায়। আর উত্তর সিটি করপোরেশনের মহাখালী, গুলশান, মোহাম্মদপুর ও লালমাটিয়া এলাকায় ব্রুটো ইনডেক্স ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ।
জরিপের ফল অনুযায়ী, ভেজা মেঝে, প্লাস্টিক ড্রাম, প্লাস্টিকের পাত্র এবং পানির ট্যাংকে মশার সম্ভাব্য প্রজননস্থল। প্রায় ২৪ শতাংশ প্লাস্টিক ড্রাম মশার প্রজননস্থল, যা গত বছর ছিল ১৯ শতাংশ। পানি জমে থাকা মেঝের মধ্যে ২৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ প্রজননস্থল। গতবার যা ছিল ২০ দশমিক ২২ শতাংশ।
ওই অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখনই প্রতিরোধ করতে না পারলে স্বাভাবিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হবে। এমনকি পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খেতে হবে।
অধ্যাপক খুরশীদ আলম বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমরা জনসচেতনতা বাড়াতে কাজ করেছি। কারণ, ডেঙ্গু রোগের সংক্রমণ বৃদ্ধির বেশির ভাগ কারণই মানুষের তৈরি। ডেঙ্গু প্রকোপের প্রকৃতিগত যেসব কারণ রয়েছে, সেগুলো নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই কষ্টসাধ্য। তবে আমরা মনে করি, সচেতনতা আমাদের অনেকাংশেই মুক্তি দিতে পারে।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির, রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম, সাবেক পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদসহ অনেকে।