বরিশাল: ঢাকার সদরঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে রাজারহাট-সি লঞ্চটি শুক্রবার সকাল ৮টায় ছেড়ে বরিশাল নৌবন্দরে পৌঁছায় বিকেল ৪টায়।
সাধারণত এই লঞ্চের যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ৬৬৯ জন। কিন্তু লঞ্চটি যখন বরিশাল বন্দরে নোঙর করে, তখন দেখা গেছে এতে যাত্রী ছিল ওই ক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি। গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে।
লঞ্চটির মাস্টার মনির হোসেন বলেন, লঞ্চের যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ৬৬৯ জন। এ তুলনায় যাত্রী কিছু বেশি ছিল। তবে খুব বেশি না। যাত্রীরা আসতে চাইলে আমাদের কী করার আছে?
লঞ্চের ডেকের যাত্রী উজিরপুরের বামরাইল গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের পাঁচজন নিয়ে আমি গ্রামের বাড়ি এসেছি ঈদ করতে।
পুরো লঞ্চে যাত্রী ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। তিলধারণের ঠাঁই ছিল না। আসতে কষ্ট হয়েছে। এরপরও সবাই মিলে বাড়িতে ঈদ করব- এটাই আনন্দের।
ঈদুল ফিতরের সময় লঞ্চের বিশেষ সার্ভিসে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন না করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা মানা হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় ঢাকা-বরিশাল নৌপথে লঞ্চের বিশেষ সার্ভিস। শুরুর দিনই লঞ্চগুলোতে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করার অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সদরঘাট থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চগুলো বরিশাল নৌবন্দরে আসতে শুরু করে রাত ১টার পর থেকে। বৃহস্পতিবার রাতে সরাসরি ও ভায়াসহ মোট ২২টি লঞ্চ বরিশাল বন্দরে নোঙর করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রত্যেকটি লঞ্চ ছিল যাত্রীতে ঠাসা।
কোনো লঞ্চেই বিআইডব্লিটিএ’র নির্দেশনা মানা হয়নি। প্রত্যেকটি লঞ্চেই ধারণ ক্ষমতার দেড়-দুই গুণ যাত্রী বেশি পরিবহন করা হয়েছে।
বরিশাল নৌবন্দর সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম বরিশাল বন্দরে নোঙর করে এমভি আবীর নামে একটি ভায়া লঞ্চ।
এর পরপরই আসতে থাকে রাজাহাট-বি, পূবালী-৭, রয়েল ক্রুজ, মানামী, সুন্দরবন-১১, সুরভী ৭ ও ৮ সহ মোট ২২টি লঞ্চ। যাত্রী নামিয়ে মাত্র দুটি লঞ্চ বাদে অন্যগুলো আবার ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
বরিশাল নৌযাত্রী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক দেওয়ান আব্দুর রশিদ নিলু শুক্রবার বিকেলে বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে নৌযাত্রী ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধি বরিশাল নৌবন্দরে ছিল। ওই প্রতিনিধির মাধ্যমে আমরা জেনেছি বিশেষ সার্ভিসের সবগুলো ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি যাত্রী নিয়ে এসেছে।
চলতি ঝড়-ঝঞ্ঝার মৌসুমে এভাবে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা ঝুঁকিপূর্ণ। লঞ্চগুলোতে বয়া ও লাইফ জ্যাকেট পর্যাপ্ত রাখা হয় না।
ঈদযাত্রায় যাত্রী পরিবহনে লঞ্চ মালিকরা বেপরোয়া হলে ঈদের আনন্দ বিষাদে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এমভি আবীর লঞ্চের যাত্রী বরিশালের বানারীপাড়ার মাইনুল ইসলাম বলেন, আমাদের লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী ছিল। এতে আসতে ভোগান্তি হয়েছে।
কিন্তু এরপরও সবার সঙ্গে ঈদ করার জন্য বাড়ি ফিরতে পেরেছি, এটাই স্বস্তির। তবে অতিরিক্ত যাত্রীবহন না করার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের আরও কঠোর হওয়া উচিত।
মানামী লঞ্চের যাত্রী উজিরপুরের শিকারপুর গ্রামের ইতি আক্তার বলেন, লঞ্চে অনেক ভিড় ছিল।
গাদাগাদির কারণে যাত্রীরা গরমে ছিল অতিষ্ঠ। কিন্তু হাজারও কষ্টের পর ঈদে স্বজনদের সঙ্গে একত্রিত হতে পারব তাই কষ্ট ভুলে গেছি।
অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করার বিষয়ে বরিশাল নৌবন্দর কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান শুক্রবার বিকেলে বলেন, রাতে যে লঞ্চগুলো এসেছে, তাতে ধারণ ক্ষমতার বেশি যাত্রী এলেও খুব বেশি যাত্রী ছিল না।
তবে শুক্রবার যাত্রীদের চাপ আরও কয়েকগুণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় ঢাকা নদীবন্দর কর্তৃপক্ষকে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের ব্যাপারে আরও কঠোর হতে হবে।