বরিশাল: শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে ঈদের ছুটি। ঈদের ছুটি কাটাতে ট্রেন, বাস ও লঞ্চঘাটে মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। আর ঘরমুখী মানুষের ভিড়কে কাজে লাগিয়ে নিয়ম ভেঙে ছাদেও যাত্রী পরিবহন করছে লঞ্চগুলো।
আর এ অভিযোগে চারটি লঞ্চকে ৫২ হাজার টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।
শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এ জরিমানা করেন বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শোভন রাংসা।
এদিকে, লঞ্চগুলো যাতে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করতে না পারে, সে জন্য বারবার বিআইডব্লিউটিএর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।
একই সঙ্গে যাত্রীদের যাত্রা নির্বিঘ্ন রাখতে মাইকে সতর্কবাণী প্রচার করছে নৌপুলিশ। এছাড়া যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে দায়িত্ব পালন করছে ফায়ার সার্ভিস।
তবে যাত্রীদের এই ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছে বিআইডব্লিউটিএ, নৌপুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। শুক্রবার রাতে রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা যায়।
ঈদের ছুটি শুরু হওয়ায় সকাল থেকেই যাত্রীদের চাপ বাড়তে থাকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে।
যাত্রীদের চাপ সামলাতে প্রতিটি নৌপথে নিয়মিত লঞ্চের পাশাপাশি বিশেষ সার্ভিস পরিচালনা করছেন লঞ্চ মালিকেরা।
শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত প্রায় ১০০টি লঞ্চ সদরঘাট থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে বলে জানিয়েছে বিআইডাব্লিউটিএ।
বেশ কয়েকটি লঞ্চে উঠে দেখা গেছে পুরো ডেকই যাত্রীতে পরিপূর্ণ। কেউ সকালে, কেউ দুপুর, বিকেল কিংবা সন্ধ্যায় সদরঘাটে এসে লঞ্চে উঠেছেন।
ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন মো. হাসিব। সদরঘাটে বরিশালগামী এমভি পারাবত-৯ লঞ্চে সকাল সাড়ে দশটায় এসে উঠেন তিনি।
এতো সকালে এসে লঞ্চে উঠার বিষয়ে তিনি বলেন, ভালো জায়গা যেন পাই তাই সকালে এসেছি। সারাদিন লঞ্চে কাটিয়েছি, একটু খারাপ লাগছে। তবুও ঈদে বাড়ি যাচ্ছি, এটাই ভালো লাগছে।
লঞ্চটির আরেক যাত্রী মোছাম্মদ আজমা বেগম রাজধানীর কমলাপুরে গার্মেন্টসে চাকরি করেন। বিকেল সাড়ে ৫টায় এসে বরগুনাগামী লঞ্চ না পেয়ে উঠেছেন বরিশালগামী লঞ্চটিতে।
এ সময় তিনি বলেন, প্রতি বছরই ঈদে বাড়ি যাওয়ার সময় নানা ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আজকেও বরিশাল গিয়ে সেখান থেকে বরগুনা যেতে হবে। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করবো, তাই কষ্ট করেও বাড়ি যাচ্ছি।
সুন্দরবন-১০ নামের অপর একটি লঞ্চে থাকা মো. সোহেল হোসেন চাকরী করেন গাজীপুরে। স্ত্রী ও তিন বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে ঝালকাঠিতে ঈদ করতে যাচ্ছেন তিনি। ডেকের একেবারে সামনে বসে থাকা সোহেল বলেন, দুপুরে বাসা থেকে বের হয়েছি।
ঘাটে আসলাম ৫টার দিকে। এসে দেখি আর জায়গা নেই ডেকের ভিতরে। তাই সামনেই বসলাম। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করবো, কষ্ট যা-ই হোক, এটাই ভালো লাগা।
এদিকে, যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় অতিরিক্ত যাত্রী তুলছে লঞ্চগুলো। ছাদে অতিরিক্ত যাত্রী তোলায় চারটি লঞ্চকে ৫২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বিকেল পৌনে ৪টার সময় সদরঘাট ছেড়ে যায় ভোলার চরফ্যাশনের বেতুয়াগামী লঞ্চ ফারহান-৫।
এ সময় অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের কারণে ফারহান-৫ ও ভোলার চরফ্যাশনের আয়েশাবাগগামী কর্ণফুলী-১২ লঞ্চকে ভ্রাম্যমাণ আদালত যথাক্রমে ২০ হাজার ও ১২ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
বরিশালগামী পারাবত-৯ ও সুন্দরবন-১০ লঞ্চ দুটিকেও অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের কারণে ১০ হাজার করে মোট ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে বিআইডব্লিউটিএ। তবে জরিমানা করে লঞ্চগুলো থেকে যাত্রীদের নামাতে দেখা যায়নি।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের পুলিশ কন্ট্রোল রুমের ইন্সপেক্টর এ কে এম জিয়াউর রহমান বলেন, আমরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছি।
এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। যাত্রীরা যাতে নির্বিঘ্নে বাড়ি যেতে পারে, সেই ধরনের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি।