জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে গত কয়েক বছরে বিশ্বে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সংখ্যা বেড়েছে। প্রতিদিনই বিশ্বের কোনো না কোনো প্রান্তে বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের খবর পাওয়া যায়। এতে প্রাণহানির পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যাও। বাড়ছে অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতিও। খবর ইয়াহু নিউজ।
এমন অবস্থায় মার্কিন আবহাওয়াবিদরা আশঙ্কা করছেন, এ বছরে বিশ্ব ২১টি বড় ধরনের ঝড়ের কবলে পড়তে পারে। এর মধ্যে ১০টির মতো হ্যারিকেন আঘাত হানতে পারে। জুন থেকে নভেম্বরেই ৩ থেকে ৬টির মতো ভয়াবহ হ্যারিকেন দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন আবহাওয়াবিদরা। এসব প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পেছনে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি, সাগরের উষ্ণতা বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক দুর্যোগ ত্রাণ সংস্থা শেল্টারবক্স এক গবেষণায় জানায়, প্রতি বছরই বিভিন্ন ঝড়ের কারণে ১ কোটি ৯০ লাখের মতো মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। গত ৫০ বছরে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ১ কোটি ৩ লাখের মতো মানুষ তাদের ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। একই রকম পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামী ২০ বছরে অন্তত ৪০ কোটির বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এ সময় বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়বেন অন্তত ২০ কোটি মানুষ।
শেল্টারবক্স আরও বলছে, প্রতি বছর ছোট বড় ঝড়ের কারণে বিশ্বের বেশকিছু অংশে জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়ছে। ইন্টারনাল ডিসপ্লেসমেন্ট মনিটরিং সেন্টার (আইডিএমসি) ও নরওয়েজিয়ান রিফিউজি সেন্টারের (এনআরসি) প্রতিবেদনের তথ্যমতে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের কারণে অভ্যন্তরীণ নতুন বাস্তুচ্যুতির ঘটনা বেশি। গত বছর ২ কোটি ৩৭ লাখ মানুষ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। তাদের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়, মৌসুমি বৃষ্টিপাত, বন্যা-খরার মতো আবহাওয়া এবং জলবায়ু-সম্পর্কিত বিপর্যয়ের মুখে বসতভিটা হারিয়েছে অন্তত ৯৪ শতাংশ মানুষ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিস্থিতি নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। একই সঙ্গে কীভাবে সংঘাত প্রতিরোধ ও সমাধান করা যায় সে বিষয়ে বিশ্বনেতাদের চিন্তাভাবনায় বিশাল পরিবর্তন দরকার। নতুবা আগামী কয়েক দশকের মধ্যে বিশ্বজুড়ে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হবে মানব সমাজ। বিশ্বের কোনো স্থান থেকে হয়তো মানব বসতিই মুছে যাবে।