গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারকে পুলিশের পক্ষ থেকে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা মেট্রপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
আজ শুক্রবার ডিএমপি এক বিবৃতিতে জানায়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘গুম ব্যক্তিদের বাড়ি বাড়ি পুলিশ, সাদা কাগজে সই দিতে চাপ, গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারকে হয়রানি’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের ডিএমপির দৃষ্টি আকর্ষণ হয়েছে।
গণমাধ্যমে অতিরঞ্জিত এবং বিকৃত সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।
ডিএমপি জানায়, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ‘গুম হওয়া’ সংক্রান্তে দায়ের করা অভিযোগের বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন এবং উপস্থাপিত অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার জন্য ভুক্তভোগী এবং অভিযোগ প্রদানকারী ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, তাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করা পুলিশ বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রথাগত দায়িত্ব।
এই দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে পুলিশ কখনো কখনো ভুক্তভোগী পরিবার কিংবা অভিযোগকারী ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর পরিবার বা অভিযোগকারী ব্যক্তিরা পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করে থাকেন বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সবুজবাগ থানা এলাকায় মাহবুব হাসান সুজন নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে পুলিশ ১০ জানুয়ারি তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। সে সময়ে মাহবুব হাসান সুজনের ভাই মো. শাকিল খান তার ভাইয়ের নিখোঁজ হওয়ারস্থান সম্পর্কে ভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেন যা এর আগে সবুজবাগ থানায় করা জিডিতে উল্লেখ নেই। এ বিষয়ে লিখিতভাবে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপনের জন্য পুলিশ অনুরোধ করলে তিনি বা তার পিতা তা দিতে অস্বীকার করেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি এ বিষয়ে মিডিয়ার কাছে মিথ্যাচার করেছেন এবং বলেছেন যে পুলিশ তার বাবার কাছ থেকে সাদা কাগজে সই নেওয়ার চেষ্টা করেন।
অপরদিকে একই ঘটনায় মাহবুব হাসান সুজনের সঙ্গে নিখোঁজ কাজী ফরহাদের বোন এবং ভগ্নিপতি নিখোঁজের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য লিখিতভাবে পুলিশের কাছে উপস্থাপন করেন বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।
ডিএমপি জানায়, পল্লবী এলাকার নিখোঁজ তরিকুল ইসলাম তারা সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করতে পুলিশ তার বাসায় যায় এবং এ সংক্রান্ত কাগজপত্রের কপি দেওয়ার অনুরোধ করে। পরবর্তীতে তরিকুল ইসলামের স্ত্রী তার শ্বশুরসহ থানায় যান। এ সময়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থানার বাইরে থাকায় তাকে কিছু সময় থানায় অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু তিনি মিডিয়ায় অভিযোগ করেন যে পুলিশ তাকে থানায় বসিয়ে রাখে। অথচ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থানায় আসা মাত্র তার সঙ্গে কথা বলেন। এর ধারাবাহিকতায় তারা গত ১৩ জানুয়ারি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত আছে জানালে পুলিশ তার বাসা থেকে তা সংগ্রহ করে।
ডিএমপি যে কোনো অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করে এবং প্রয়োজনীয় অনুসন্ধান বা তদন্ত সমাপানান্তে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে থাকে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, অনুসন্ধান বা তদন্ত চলাকালে অভিযোগকারী বা ভুক্তভোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করা তদন্ত বা অনুসন্ধান কার্যক্রমের অংশ। কিন্তু পুলিশের কার্যক্রমকে হয়রানি হিসেবে উল্লেখ করে উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রচার করা এবং এ সম্পর্কে একতরফা বিবৃতি দেওয়া পুলিশের তদন্ত কাজে অসহযোগিতার নামান্তর।
ভবিষ্যতে এ ধরনের অতিরঞ্জিত, বিকৃত এবং মনগড়া তথ্য প্রকাশ থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করেছে ডিএমপি। একইসঙ্গে পুলিশের আইনানুগ দায়িত্ব পালনে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা কামনা করা হয় বিবৃতিতে।