ভোলা সদর উপজেলার পরানগঞ্জ বাজার এলাকায় কিশোর গ্যাং ভুট্ট সিকদারের ফেসবুক স্টোরিতে ‘চাইনিজ ছুড়ি’সহ দেওয়া পোষ্টে ‘হা হা’ রিয়েক্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার (১৩ জুন) সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত রড, লাঠিসোটা, ইট পাটকেল নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে ভোলা থানা পুলিশ ও ডিবির একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনায় মো. জামাল, আনোয়ার, মোসলেউদ্দিন ও মোকাম্মেলসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতরা ভোলা সদর হাসপাতালে ও প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা নিয়েছে।
এ ঘটনায় ওই বাজারের শাহিন প্লাজার জানালার গ্লাস ও ব্যাংকের এসি ভেঙ্গে গেছে। এছাড়াও পার্শ্ববর্তী দোকানগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ মার্কেটের মালিক ও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভোলা সদর উপজেলার ২নং ইলিশা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড পরানগঞ্জ বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. বাদশা সিকদারের ছেলে কিশোর গ্যাং ভুট্ট শিকদার তাঁর ফেসবুকে ‘চাইনিজ ছুড়ি’সহ একটি ছবি পোষ্ট দেয়। ওই পোষ্টে একই এলাকার মোশারফ হোসেন জান্টুর ছেলে রাজিব মজগুনী ‘হা হা’ রিয়েক্ট দেয়।
এই রিয়েক্ট দেয়াকে কেন্দ্র করে কিশোর গ্যাং ভুট্ট শিকদার মেসেজ ও কল করে রাজিব মজগুনীকে হুমকি ধামকি প্রর্দশন করে এবং স্থানীয় নাজিউর রহমান কলেজ মাঠে দেখা করতে বলে।
গত রবিবার (১২ জুন) বিকালে রাজিব মজগুনী ভুট্ট শিকদারের সাথে দেখা করতে আসলে পরানগঞ্জ বাজারের ব্রীজের উপর উভয়ের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে সন্ধ্যায় উভয় কিশোরের অভিভাবকের উপস্থিতিতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা শালিসি বৈঠকের মাধ্যমে এ ঘটনা সমাধান করে দুজনকে মিলমিশ করিয়ে দেন।
পরদিন সোমবার (১৩ জুন) বিকালে রাজিব মজগুনী পরানগঞ্জ বাজারের ব্রীজ উপর আসে। এসময় এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুনরায় কিশোর গ্যাং ভুট্ট সিকদার ও তাঁর বন্ধু শান্ত কাজী, রায়হান, রনি, রিয়াজসহ ১৫-২০ জন মিলে রাজিব মজগুনীকে কলেজের মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে চাবুক দিয়ে রাজিবকে প্রচন্ড আঘাত করে ভুট্ট ও তাঁর বাহিনী।
এসময় রাজিবের গলায় কিশোর গ্যাং ভুট্ট ছুড়ি ধরে বলে, ‘তোরে মেরে ফেলবো। আমার বাবা অনেকগুলো মার্ডার করেছে কিছুই হয়নি। তোকেও মেরে ফেলবো’।
রাজিবকে মারধরের খবর পেয়ে তাঁদের বাড়ির লোকজন গিয়ে ভুট্ট বাহিনীর হাত থেকে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এই ঘটনা নিয়ে ওই দিন রাতে পরানগঞ্জ বাজারের উপর কাচিয়া ইউনিয়নের কাজী গ্রুপের মামুন কাজী, মাসুদ কাজী ও ইলিশা ইউনিয়নের কামাল মোল্লা, সোহাগ মজগুনী, ইসমাইল মজগুনী গ্রুপের লোকজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়।
এক পর্যায়ে দুই গ্রুপের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এরপর দুই গ্রুপ দুই দিকে চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পর কাজী গ্রুপ ও মজগুনী গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। দুই পক্ষ ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এই তান্ডব চলছে প্রায় ঘন্টা ব্যাপী।
ইটপাটকেলের আঘাতে উভয় পক্ষের প্রায় ১৫ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে মো. জামাল, মোসলেউদ্দিন ও মোকাম্মেলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং বাকীদের প্রাথমকি চিকিৎসা দেওয়া হয়। দুই পক্ষের এই ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষের ঘটনায় ব্যবসায়ী ও ঘর মালিকরা অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বাজারের শাহিন প্লাজার ৫টি জানালার গ্লাস ও ব্যাংকের এসি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। দীপা ইলেকট্রনিকের দুইটি গ্লাসের সুকেজ, তৃপ্তি হোটেলের ডিজিটাল মেশিনের গ্লাস ও সোহাগ স্টোরের ফ্রীজের গ্লাস ভেঙ্গে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
রাজিব মজগুনী বলেন, আমি পরানগঞ্জ বাজারের ব্রীজের কাছে দাঁড়িয়ে রয়েছি। রবিবারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিশোর গ্যাং ভুট্ট সিকদার ও তাঁর বন্ধু শান্ত কাজী, রায়হান, রনি, রিয়াজসহ ১৫-২০ জন মিলে আমাকে কলেজের মাঠে নিয়ে যায় এবং সেখানে চাবুক দিয়ে প্রচন্ড আঘাত করে। এবং গলায় ছুড়ি ধরে বলে, ‘তোরে মেরে ফেলবো’।
পরবর্তীতে আমাদের বাড়ির লোকজন খবর পেয়ে আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। তাঁরা উদ্ধার না করলে এই সন্ত্রাসী কিশোর গ্যাং ভুট্ট সিকদার আমাকে মেরেই ফেলতো। রাজিব মজগুনী আরো বলেন, ‘ওদের সাথে আমার কোন শত্রুতা নাই, সামান্য ফেসবুকের স্টোরিতে একটা হা হা রিয়েক্ট দেয়া নিয়ে এতকিছু।
অন্যদিকে কাচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. জহুরুল ইসলাম নকীব ও ইলিশা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন ছোটন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা বলে উভয়পক্ষকে আশ্বস্ত করেন।
এ বিষয়ে ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) এনায়েত হোসেন বলেন, ফেসবুকের স্টোরিতে ‘হা হা’ রিয়েক্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে পরানগঞ্জ বাজারে মজগুনী গ্রুপ ও কাজী গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে আমরা পুলিশের কয়েকটি টিম নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের কয়েকজন ভোলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এই ব্যাপারে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।