২০১৭ সালের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের ১৯ ধারা অনুযায়ী প্রাপ্ত বয়স হওয়ার আগে বিশেষ ক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতিতে বিয়ের অনুমতির জন্যে কোন আদালতে যেতে হবে, তা নির্ধারণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. ইলিয়াস আলী মণ্ডল এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এসংক্রান্ত বিষয়ে করা রিটের সম্পূরক আবেদনের শুনানি নিয়ে বুধবার (২৯ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. ইলিয়াস আলী মণ্ডল। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
এর আগে এ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে মোহাম্মদ আরিফুর রহমানের পক্ষে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. ইলিয়াস আলী মণ্ডল।
রিটকারী আইনজীবী জানান, বয়স নির্ধারণে বিশেষ প্রেক্ষাপটে ছাড় পাবেন এমন বিধান রেখে সংসদে ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭’ পাস হয়েছে। তাতে নারীদের মতো পুরুষরাও বিশেষ প্রেক্ষাপটে ১৮ বছরের আগেই বিয়ে করার সুযোগ পাবেন।
বিভিন্ন মহলের আপত্তির মধ্যেই ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ মেয়েদের বিয়ের বয়সে ছাড়ের বিধান রেখে আলোচিত ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ বিল-২০১৬’ সংসদে ওঠে ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর। ব্রিটিশ আমলে প্রণীত ‘চাইল্ড ম্যারেজ রেসট্রেইন্ট অ্যাক্ট-১৯২৯’ বাতিল করে নতুন আইন করতে বিলটি সংসদে তোলা হয়।
ওই বিলে বলা হয়েছে, আইনের অন্যান্য বিধানে যা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্ক সর্বোত্তম স্বার্থে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী এবং বাবা-মায়ের সম্মতি অনুযায়ী বিধির মাধ্যমে নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিবাহ কার্যক্রম হলে তা এ আইনের অধীন অপরাধ বলে গণ্য হবে না, যা আগে অপ্রাপ্তবয়স্কের ক্ষেত্রে শুধু নারীদের কথা উল্লেখ ছিল। এছাড়া ‘বিশেষ প্রেক্ষাপট’ বিধির মাধ্যমে নির্ধারিত রাখা হয়েছে।
প্রস্তাবিত আইনে মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স আগের মতো ১৮ বছর রাখা হলেও ‘বিশেষ প্রেক্ষাপটে’ অপ্রাপ্তবয়স্কদের বিয়ের সুযোগ রাখা হয়। এতে ক্ষেত্রবিশেষে ১৮ বছরের আগেও বিয়ে দেওয়া যেতে পারবে। কিন্তু এখানে বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্ক সর্বোত্তম স্বার্থে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী এবং বাবা-মায়ের সম্মতি অনুযায়ী বিধির মাধ্যমে নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিবাহ কার্যক্রম হলে, তা এ আইনের অধীন অপরাধ বলে গণ্য হবে না।
তবে সেখানে কোন আদালত, তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। এখন অভিভাবকরা কোন আদালতে যাবেন। নারী ও শিশু আদালত, বিশেষ আদালত নাকি অন্য কোথাও। আবার এ বিষয়ে কোনো বিধিও করা হয়নি। তাহলে যদি কেউ তার সন্তানকে বিয়ে দিতে বা করাতে চান কোন আদালতে যাবেন সেই প্রশ্নে রিটটি করা হয়। ওই রিটে মঙ্গলবার (২৮ জুন) সম্পূরক আবেদন করা হয়। ওই আবেদন শুনানি নিয়ে এ রুল জারি করেন আদালত।
২০১৭ সালের ১১ মার্চ বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭ আইনটি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। ওই আইনের ১৯ ধারায় (বিশেষ বিধান) বলা হয়েছে, ‘এ আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, বিধি দ্বারা নির্ধারিত কোনো বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্ত বয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থে, আদালতের নির্দেশ এবং পিতা-মাতা বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিভাবকের সম্মতিক্রমে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণক্রমে বিবাহ সম্পাদিত হইলে উহা এ আইনের অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না।’