রাজধানীর তুরাগের চন্ডালভোগ এলাকায় বাসায় চুরির সময় হাতে নাতে ধরা পড়ে তালা কাটা দুই চোর। পরে তাদের আটকে রেখে তল্লাশি চালালে তাদের কাছ থেকে বের হয়ে আসে চুরির কাজে ব্যবহৃত ছুরি, কাটার, স্ক্রু ড্রাইভার, ইনজেকশনের সিরিজ, তালা কাটার যন্ত্রসহ আরো বেশ কিছু যন্ত্রপাতি।
আটককৃতরা দুইজন হলেন- নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার রশীদের ছেলে শহীদুল (২৭), অপরজন হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কাউতলি থানার চান মিয়ার ছেলে মাসুদ (২৫)। বুধবার (১২ জুলাই) সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনা শুনে চোরদের উৎপাতে অতিষ্ঠ তুরাগ থানা এলাকার পথচারী ও এলাকাবাসীরা জড়ো হতে থাকে।
এর আগে বিষয়টি তুরাগ থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মেহেদী হাসানকে জানানো হলেও প্রায় এক ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। পরে এসআই মোজাম্মেলকে চুরির কাজে ব্যবহৃত উদ্ধার হওয়া জিনিসপত্র বুঝিয়ে দিয়ে চোরদের তাদের হেফাজতে দিতে চাইলেও তিনি উল্টো ঘটনাস্থলে থাকা লোকজনের উপর চড়াও হন।
তিনি বলেন, বাড়ির মালিককে আগে থানায় গিয়ে মামলা করতে হবে এরপর মামলা হলে চোরদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হবে নয়তো গ্রেফতার করা যাবে না।
এসময় হাতে নাতে চুরির কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিসহ ধরার পরেও কেন পুলিশ তাদের হেফাজতে নিবে না এমন প্রশ্ন করলে বাড়ির মালিক মোস্তফা কামাল সুমন ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদক সাংবাদিক মনির হোসেন জীবনের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করেন পুলিশের ওই এসআই। পুলিশের এমন আচরণে হতবাক পুরো এলাকাবাসী পরে বাধ্য হয়ে চোর দু’জনকে পুলিশের সামনেই ছেড়ে দেয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী ও একাধিক ট্রাক ড্রাইভার জানান, তুরাগ থানার এসআই মোজাম্মেল দীর্ঘদিন ধরে তুরাগের পঞ্চবটি ও তুরাগের নতুন সেক্টরগুলোতে চাঁদা আদায় করে আসছে নিরীহ ট্রাক চালকদের কাছ থেকে। এছাড়াও তুরাগের ভাঙারি দোকানদারদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা নিয়ে থাকে পুলিশের এই এসআই। আর চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে বাজে ব্যবহার ও মামলা দেওয়ার ভয়ভীতি দেখায়।
ভুক্তভোগী বাড়িওয়ালা সুমন জানান, এর আগেও এই চোরেরা ভাড়াটিয়া রুম থেকে ২২ হাজার টাকা, মোবাইল ফোন চুরি করে নিয়ে গেছে। ঈদের সময় লোকজন কম থাকার সুযোগে আজ আবারো বাসার মধ্যে ঢুকে চুরির চেষ্টা করছিলো ঠিক তখনি আমরা তাদের ধরি। পরে আচার আচরণে সন্দেহ হলে ভাড়াটিয়ারা মিলে তাদের তল্লাশি চালায়,পরে তাদের পকেট থেকে একে একে বের হতে থাকে চুরির কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হলেও পুলিশ এসে উল্টো সবার সাথে বাজে আচরণ শুরু করে। পরে বাধ্য হয়ে চোরদের ছেড়ে দেয়া হয়।
তুরাগের স্থায়ীবাসিন্দারা জানান, তুরাগে গভীর রাতে ও দিনে-দুপুরে চুরি হয়ে যাচ্ছে লাখ লাখ টাকার মালামাল। লোহার তৈরি গেট কেটে, তালা ভেঙে বহুতল ভবনের নিরাপত্তা বলয় ভেঙে ঘটছে এমন ঘটনা। বেশ কিছু দিন ধরে বেড়েছে চুরি ডাকাতির ঘটনা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তুরাগ থানায় পুলিশের কাছে গেলে, যা হয়ে যাচ্ছে নিছক সাধারণ ঘটনা! চুরি-ডাকাতির মতো ঘটনায় থানায় গেলেই নেওয়া হয় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) কিংবা অভিযোগ। এটি এন্ট্রি করতেও পোহাতে হয় নানা ভোগান্তি। তদন্তে নেই কোন গতি। ভুক্তভোগীরা চুরির ঘটনা তদন্তের খোঁজখবর নিতে ফোন করলে দায়িত্বরত অফিসাররা বিরক্ত হন। পুলিশের অসহযোগিতার কারণেই এখন চুরির ঘটনা ঘটলেও থানায় যেতে চায় না অনেকে।
এ বিষয়টি উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোর্শেদ আলমকে জানানো হলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে প্রতিবেদককে জানান তিনি।