নতুন আইএমএফ রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ট্রাস্ট (আরএসটি) থেকে বাংলাদেশের ঋণ চাওয়ার চিঠির ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, নতুন ট্রাস্ট চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একটি আরএসটি ঋণের কাজ এগিয়ে যাবে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ঋণের জন্য খাত ও অর্থের পরিমাণ চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে। খবর রয়টার্স।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ঝুঁকি লাঘবে বুধবার (৩ আগস্ট) আইএমএফ অর্থসহায়তা দিতে সম্মত হয়েছে। তবে বাংলাদেশ ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণসহায়তা চাইলেও আইএমএফ কী পরিমাণ অর্থ দিতে রাজি হয়েছে, তা উল্লেখ করেনি। সংস্থাটি একটি বিবৃতিতে বলেছে, বাংলাদেশকে কী পরিমাণ সহায়তা প্রদান করা হবে, তা এখনও আলোচনা করা হয়নি।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়ে চিঠি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
এই চিঠির জবাবে এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে আইএমএফ। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে আরএসটি ফান্ড থেকে অর্থ পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপর্যায়ে এ বিষয়ে বৈঠক করবে। সে সময় ঋণের একটি কাঠামো তৈরি করা হবে। একই সময়ে অর্থের পরিমাণও নির্ণয় করা হবে।
এতে আরও বলা হয়েছে, ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের দরুন অর্থনীতির চলমাল অস্থিরতা সামাল দিতে বাংলাদেশ বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এরই মধ্যে সরকার মুদ্রাপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ নিয়েছে, মুদ্রা বিনিময় হার শিথিল করেছে, কম জরুরি পণ্য এবং জ্বালানি আমদানিতে সাময়িক কড়াকড়ি আরোপ করেছে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে উদ্যোগের পাশাপাশি কম জরুরি প্রকল্পে বরাদ্দ স্থগিত করে বেশি জরুরি খাতে ব্যবহারের নির্দেশনা জারি করেছে। এ সত্ত্বেও চলমান বৈশ্বিক সংকটের কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও বিভিন্ন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে।
তাৎক্ষণিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে পারলেও বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের মতো দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাগুলো সঠিকভাবে সামাল দেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে উল্লেখ করে আইএমএফ বলেছে, এসব সমস্যা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে। এ ক্ষেত্রে অর্থসহায়তা দিতেই আরএসটি গঠন করা হয়েছে এবং বাংলাদেশও এ তহবিল থেকে অর্থ পেতে পারে। এ তহবিল থেকে ঋণ পেতে হলে আইএমএফ-সমর্থিত প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।
সংস্থাটি আশা করছে, পরিস্থিতির আরও অবনতি হলে আরএসটি তহবিলের ঋণ এবং আইএমএফ সমর্থিত প্রকল্প সুরক্ষা দিতে পারবে। এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের মতো দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা মোকাবিলায় বাংলাদেশের জন্য সহায়ক হবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, সক্ষমতা বিবেচনায় আইএমএফ বাংলাদেশকে ঋণ দিতে রাজি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আরএসটি ফান্ড থেকে আইএমএফ ২০ বছর মেয়াদে ঋণ দিয়ে থাকে। যার গ্রেস পিরিয়ড ১০ বছর। তবে সুদ কী পরিমাণ হবে, তা আলোচনা সাপেক্ষে নির্ধারণ করা হয়।
এর আগে গত ২৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস ঋণ প্রসঙ্গে বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে ভবিষ্যতে যদি ব্যালান্স অব পেমেন্টের ঘাটতি বাড়ে, সে জন্যই মূলত অর্থ মন্ত্রণালয় আলোচনা সাপেক্ষে সহায়তা চেয়েছে। এটি সহজ শর্তের ঋণ। বাংলাদেশের ইতিহাসে একাধিকবার এ ধরনের ঋণসহায়তা আইএমএফের কাছ থেকে নেয়া হয়েছে।