এ এক বিরল শ্রদ্ধার দৃষ্টান্ত। কলকাতা থেকে প্রায় দেড়শ কিলোমিটার দূরে বর্ধমানের খণ্ডঘোষ গ্রামে এক মিষ্টি ব্যবসায়ী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নামকরণ করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর নামে। শুধু তাই নয়, নিজের ছেলের নামও রেখেছেন ‘শেখ মুজিবুর রহমান’। নিজ দেশের স্বাধীনতা দিবসের আনন্দে যখন সবাই উল্লাসে ব্যস্ত থাকেন, সেদিনই বঙ্গবন্ধুর শাহাদতবার্ষিকী হওয়ায় শোকে বন্ধ রাখা হয় বঙ্গবন্ধুর নামাঙ্কিত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।
কলকাতা থেকে পূর্ব বর্ধমানের দূরত্ব প্রায় ১১০ কিলোমিটার। সেখান থেকে আরও অন্তত ২৫ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল খণ্ডঘোষ। আঁকাবাঁকা রাজ্য সড়ক ধরে এগোলোই চোখে পড়বে রাস্তার পাশে আড়াডাঙা গ্রাম। আর সেখানেই চোখ আটকে যাবে ‘বঙ্গবন্ধু মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’ নামে একটি মিষ্টির দোকানে।
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের বঙ্গবন্ধু উপাধি কারো অজানা নয়। তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সেই নামে দোকান খুলেছেন এক ব্যবসায়ী। তারই খোঁজে সময় সংবাদের ক্যামেরা পৌঁছায় সেখানে।
বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা এবং তাকে ওই এলাকার মানুষের কাছে জাগ্রত রাখতেই ১৯৭১ সালের পর এই নামেই স্থাপিত হয় দোকানটি। শুধু তাই নয়, বাড়ির বড় ছেলের নামও রাখা হয় শেখ মুজিবুর রহমানের নামের সঙ্গে মিলিয়ে।
‘বঙ্গবন্ধু মিষ্টান্ন ভাণ্ডার’-এর উত্তরাধিকার সূত্রে মালিক নজরুল খান বলেন, ‘দোকানের নামটি শেখ মুজিবের নামে করা হয়েছিল এবং আমি আমার বড় ছেলের নাম মুজিবুর রহমান রেখেছি নামটিকে জাগ্রত রাখার জন্য এবং স্মরণীয় রাখার জন্য। বাবা যতদিন বেঁচে ছিলেন, শ্রদ্ধা জানাতেন। আমরাও সেভাবে শ্রদ্ধা জানিয়ে আসছি।’
স্থানীয় মানুষের মধ্যেও বঙ্গবন্ধুর নামে দেয়া এই মিষ্টির দোকান নিয়ে রয়েছে অনেক কৌতূহল।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্য এখনো আমাদের মন কাঁদে। হয়তো আমরা ওখানে নেই, তবুও এখান থেকে আমরা এখনো শ্রদ্ধা জানাই।’ আরেক ব্যক্তি বলেন, ‘ওনার বাবা নাকি এই নাম দিয়েছিলেন বাংলাদেশের মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এটি শুনে আসছি।’
মিষ্টির দোকানে আগত এক ব্যক্তি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এপার বাংলা-ওপার বাংলার যে মিল-মহব্বত ছিল, এটা ধরে রাখার জন্য ওনারা এই নামটি দিয়েছিলেন হয়তো।’
ভারতের স্বাধীনতা দিবস ১৫ আগস্ট। দিনটিতে দেশের মানুষ আনন্দ-উল্লাস করেন। উত্তোলন করা হয় জাতীয় পতাকা। আনন্দের এই দিনটিকেও তারা শোকের দিন হিসেবে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। এটা একটা বিরল শ্রদ্ধা বলেই মনে করেন স্থানীয়রা।