রাজধানীর উত্তরায় ব্যাংকের এটিএম বুথে ব্যবসায়ী খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। ওই ঘটনাকে নিছক ছিনতাইয়ের জন্য খুনের কথা বলা হলেও পরিবারের দাবি ভিন্ন।
বুথের পাশের একটি সিসিটিভির ফুটেজে ধরা পড়েছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। খুনের সময় বুথের পাশেই গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়েছিল কয়েক বন্ধু। মুমূর্ষু শরিফকে উদ্ধার বা হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা না করে সটকে পড়েন তারা। পরিবার বলছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
গত ১২ আগস্ট রাত ১২টা ৪০ মিনিটে একটি সাদা প্রাইভেটকার এসে থামে এটিএম বুথের সামনে। ব্যবসায়ী শরিফ উল্লাহ গাড়ি থেকে নেমে প্রবেশ করেন বুথে। কিছুক্ষণ পর বুথে ঢোকে মাস্কপরা এক ব্যক্তি। বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা বুথের নিরাপত্তাকর্মী ও প্রাইভেটকারে থাকা এক ব্যক্তি গাড়ি থেকে নেমে পায়চারিও করেন। হঠাৎ হামলার দৃশ্য দেখে বুথের নিরাপত্তারক্ষী ডেকে আনেন পাশে থাকা আরেক নিরাপত্তারক্ষীকে।
ব্যবসায়ী শরিফ উল্লাহ যখন রাতে বুথে টাকা তুলতে ঢুকেছিলেন তখন পেছন থেকে ছিনতাইকারীকে বুথে ঢোকার সে দৃশ্য দেখেছিল শরিফ উল্লাহর সঙ্গে আসা তিন বন্ধু, যারা সেখানে গাড়িতে অপেক্ষা করছিলেন।
বুথ থেকে বেরিয়ে যাওয়া ব্যক্তিকে ধাওয়া করেন কয়েকজন। এর পরপরই একজন গাড়ি থেকে নেমে বুথের গেটে কিছু সময় দাঁড়িয়ে মুমূর্ষু শরিফকে দেখেন। পরে স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই প্রাইভেটকারের দরজা বন্ধ করে গাড়িটি নিয়ে সটকে পড়েন। ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগ, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ওই তিন বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই বেরিয়ে আসবে আসল রহস্য।
শরিফউল্লাহর ভাই জানান, ‘আমার ভাই যখন বুথে ঢুকে টাকা তুলছে তখন একজন প্রবেশ করে, এদিক-ওদিক দেখে সরাসরি ঘাড়ে ছুরি দিয়ে আঘাত করে প্রথমে। পরে আবার দুই থেকে তিনবার ঘাড়েই আঘাত করেছে। যদি ছিনতাইকারী হতো তাহলে সে টাকা নেয়ার চেষ্টা করত। দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি হতো টাকা নেয়ার জন্য, তখন যদি ছুরি মারত তাহলে আমরা বুঝতাম ছিনতাইকারী। কিন্তু আমার ভাইয়ের সঙ্গে তা হয়নি, সরাসরি ছুরিকাঘাত ঘাড়ে করা হয়েছে। একদম প্রফেশনাল কিলার হিসেবে হত্যার কাজটি করেছে। ছিনতাইকারী হলে শরীরের বিভিন্ন জায়গাতে আঘাত করত। তা তো করেনি প্রতিটি আঘাত ঘাড়ে করেছে। তাহলে আমরা বুঝতে পারছি যে, সে এখানে হত্যা করার জন্যই এসেছিল। আমার ভাইয়ের আরেক বন্ধু মোস্তাফিজুর রহমান জুয়েল, গাড়ি থেকে বের হয়ে এসে দেখল বুথের দরজা খুলে, যে আমার ভাই মারা গেছে, তখন স্বাভাবিকভাবে হেঁটে গিয়ে গাড়ির দরজা খুলে প্রবেশ করে সেখান থেকে সটকে পড়ে।’
নিহত শরিফউল্লাহর স্ত্রীর প্রশ্ন, বন্ধুরা তাকে হাসপাতালে না নিয়ে পালিয়ে গেল কেন?
শরিফউল্লাহর স্ত্রী বলেন, ‘ছিনতাকারী টাকা চাইবে, না দিলে ধস্তাধস্তি হবে, তখন এখানে-ওখানে আঘাত করতে পারে; কিন্তু তা করা হয়নি। তার বন্ধু তাকে হাসপাতালে না নিয়ে গাড়ি চালিয়ে চলে যায়, এ থেকে আমার সন্দেহ হয়। কেন তাকে হাসপাতালে নিল না। ওই অবস্থায় দেখে স্বাভাবিকভাবে হেঁটে তাকে ফেলে রেখে জুয়েল চলে গেল কীভাবে।’
পুলিশ বলছে, গ্রেফতার করা ছিনতাইকারীদের সঙ্গে শরিফের বন্ধুদের সম্পর্ক অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে।
ডিএমপির পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, সব বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করছি। তদন্ত চলছে, যাদের নাম এসেছে প্রয়োজনে তাদের কেউ ডাকা হবে।
ঘটনার পর থেকে ওই তিন বন্ধুর মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। তাদের কোনো খোঁজ নেই। এদিকে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআইর কাছে হস্তান্তরের জন্য আবেদন করা হয়েছে পরিবারের পক্ষ থেকে।