পরমাণু কর্মসূচির দিকে এগোচ্ছে মিয়ানমার। দেশটির জান্তা সরকার এরই মধ্যে পরমাণু প্রকল্প নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে। শুরুর দিকে ‘স্বল্প পরিসরে’ পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করার কথা বলছে তারা। তবে একটা পর্যায়ে দেশটি পরমাণু অস্ত্র অর্জনের দিকে হাঁটতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ইলেভেন মিয়ানমারের এক প্রতিবেদনমতে, জান্তা সরকারের তথ্য উপমন্ত্রী ও স্টেট অ্যামিনিস্ট্রেশন কাউন্সিলের (এসএসি) তথ্য বিভাগের প্রধান মেজর জেনারেল জ মিন তুন মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে এক ঘোষণায় বলেছেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে স্বল্প পরিসরে পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করা হবে। সেই লক্ষ্যে জনমত যাচাইয়ের জন্য ইয়াঙ্গুনে প্রথমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি প্রযুক্তি তথ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হবে।
পরমাণু কর্মসূচি ‘শান্তিপূর্ণ উপায়ে’ ব্যবহার করা হবে বলে দাবি করেন জান্তা সরকারের এক কর্মকর্তা। এদিন মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোয় এক সংবাদ সম্মেলনে মেজর জেনারেল জ মিন তুন বলেন, ‘আসল বিষয় হচ্ছে, পরমাণু বিদ্যুৎ আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবহার করব। তবে জনগণকে না জানিয়ে আমরা কোনো কিছুই করব না।’
পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবহার হবে বলে দাবি করলেও বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত পরমাণু অস্ত্রের উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে এগোচ্ছে মিয়ানমার জান্তা সরকার।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর মিয়ানমারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতীতে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। ওই প্রতিবেদনে পরমাণু অস্ত্র নিয়ে জান্তা সরকারের উচ্চাকাঙ্ক্ষার কথা তুলে ধরা হয়। বলা হয়, আগের সেনা সরকারের মতোই বর্তমান সরকারও পরমাণু অস্ত্র অর্জনে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে।
সঙ্গে মালয়েশিয়ার বৈঠক
দ্য ইরাবতীর ওই প্রতিবেদনমতে, চলতি মাসের শুরুর দিকে রাশিয়া সফর করেন মিয়ানমার জান্তা সরকারের প্রধান মিন অং হ্লাইং। তার এ সফরের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে যায়, হ্লাইং তার পূর্বসূরি আরেক জান্তা শাসক থান শোয়ের অধরা স্বপ্নের পেছনেই ছুটছেন। আর সেই স্বপ্ন হচ্ছে, যেকোনো উপায়ে পরমাণু শক্তির অধিকারী হওয়া।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় দুই দশক আগে তৎকালীন শাসক থান শোয়ে তার শত্রুর হুমকি মোকাবিলায় পরমাণু অস্ত্র নিয়ে নিজের সুপ্ত মনোবাসনা প্রকাশ করেন। সেই সময় নিজের ঘনিষ্ঠ সহযোগী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রী উ থাংকে উদ্দেশ করে তিনি প্রায়ই বলতেন, ‘উ থাং, যদি সম্ভব হয়, একটি পরমাণু বোমা বানাও। এমনকি সেটা যদি একটি বেলের (বেল ফল) আকারেরও হয়, তাতেও সমস্যা নেই।’
এরপর প্রায় দুই দশক পেরিয়ে গেছে। কিন্তু থান শোয়ের সেই স্বপ্ন ত্যাগ করেনি মিয়ানমার। বরং শোয়ের নিয়োগ সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং এখন পূর্বসূরির সেই স্বপ্নকে এগিয়ে নিতে চাচ্ছেন।
সবশেষ রাশিয়া সফরে এ ব্যাপারে আলাপ অনেকটা এগিয়ে নিয়েছেন মিন অং হ্লাইং। সফরকালে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় জ্বালানি প্রতিষ্ঠান রোসাটমের প্রধান অ্যালেক্সি লিখাশেভের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
মিয়ানমার
তারও আগে গত জুলাইয়ে রাশিয়ায় একটি ব্যক্তিগত সফরের সময় অ্যালেক্সি লিখাশেভের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। ওই সময় মিয়ানমারে পরমাণু শক্তি ব্যবস্থাপনার বিষয়ে প্রশিক্ষণের জন্য রাশিয়া-মিয়ানমারের একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়।
এরপর চলতি মাসের সফরে মিয়ানমারে একটি সম্ভাব্য মডুলার পরমাণু চুল্লি স্থাপনের ব্যাপারে রোসাটমের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছে। মূলত এ চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতেই দ্য ইরাবতী বলেছে, রাশিয়ার সহায়তায় পরমাণু অস্ত্র অর্জন করতে চাচ্ছে মিয়ানমার।