গাজীপুরের সালনায় বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের রিসোর্ট অ্যান্ড পিকনিক স্পট
ঢাকার আশপাশে ঘোরাঘুরির জন্য সবচেয়ে বেশি রিসোর্ট, পর্যটন স্পট গড়ে উঠেছে গাজীপুরে। তবে সরকারিভাবে ন্যাশনাল পার্ক ছাড়া ছিল না তেমন কোনো উদ্যোগ। সম্প্রতি গাজীপুরের সালনায় প্রায় সাড়ে ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি রিসোর্ট অ্যান্ড পিকনিক স্পট করেছে পর্যটন করপোরেশন। তড়িঘড়ি করে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে উদ্বোধন করলেও এখনো চালু হয়নি। রিসোর্টটিতে দুই রুমে ছয়টি কটেজ, একটি কনফারেন্স হল, দুটি পিকনিক শেড ও একটি রেস্তোরাঁ আছে। কটেজে দিনে ছয় হাজার টাকা ভাড়া হাঁকলেও নেই আধুনিক সাজ-সরঞ্জাম বা সুবিধা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও মোহনীয় নয়। তাই সরকারের এত টাকা খরচ করে তৈরি রিসোর্টের সফলতা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
পর্যটক ও ট্যুরিজম খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রিসোর্ট মানেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মনোরম পরিবেশ থাকার কথা। কিন্তু সালনা রিসোর্টে ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা নেই। আর সব রিসোর্টেই সুইমিংপুল, জিম, বার, স্পা সেন্টার, প্লে গ্রাউন্ড থাকে। এখানে সে ব্যবস্থাও রাখা হয়নি। দৃষ্টিনন্দন কোনো বাগান নেই। বরং বিভিন্ন জায়গায় থাকা ঝোপ কেটে পরিষ্কার করা হয়েছে। যে কয়েকটি বসার জায়গা বা বেঞ্চ তৈরি করা হয়েছে, সেখানে বসলে নজরে আসবে বেশ কয়েকটি বড় ট্যাংক। এমন পরিবেশে একজন ট্যুরিস্ট কেন যাবে এই রিসোর্টে- এমন প্রশ্ন রাখেন তারা।
তবে পর্যটন করপোরেশন বলছে, সালনা রিসোর্ট অ্যান্ড পিকনিক স্পট খুব আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত একটি রিসোর্ট। প্রাকৃতিক পরিবেশ থাকায় এখানে বিদেশি পর্যটকও আসবে। রিসোর্টের সুইমিংপুলসহ আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে কাজ করা হবে। কিন্তু আগের প্রকল্পে কেন এই সুযোগ-সুবিধাগুলো নিশ্চিত করা হয়নি তার সদুত্তর দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
গত ৫ সেপ্টেম্বর ‘সালনা পর্যটন রিসোর্ট অ্যান্ড পিকনিক স্পট’ উদ্বোধন করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী।
উদ্বোধন হলেও এখন পর্যন্ত সাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়নি রিসোর্টটি। রেস্তোরাঁও চালু হয়নি। সাড়ে তিন বছর সময় ব্যয় করে নির্মাণ শেষে উদ্বোধন করার পরও কেন উন্মুক্ত নয় তার উত্তরও দিতে পারেনি বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বন বিভাগের ৩ দশমিক ১২ একর জমি ইজারা নিয়ে রিসোর্টটি তৈরি করেছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন। তৈরি করতে খরচ হয়েছে ৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে এটির কাজ শুরু করে শেষ হয় ২০২২ সালের জুনে। এই সাড়ে তিন বছর সময় ব্যয় করে এখানে নির্মাণ করা হয়েছে দুই রুমের ছয়টি কটেজ। আরও আছে একটি কনফারেন্স হল, দুটি পিকনিক শেড ও একটি ৬০ আসনের রেস্তোরাঁ।
ঢাকা থেকে ৩৩ কিলোমিটার দূরে গাজীপুরের সালনা রিসোর্ট অ্যান্ড পিকনিক স্পট। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, এই রিসোর্টের মূল আকর্ষণ শুধু ছয়টি কটেজ। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রতিটি কটেজে দুটি বেডরুম, একটি ড্রইং কাম ডাইনিং রুম রয়েছে। তবে কটেজের রুমগুলো আয়তনে ছোট। গরম পানির জন্য গিজারের ব্যবস্থা নেই। টয়লেট ও রুমের বিভিন্ন উপকরণও বর্তমান সময়ের উপযোগী নয়। ফ্রিতে ডাইনিং রুম ব্যবহারের সুযোগ থাকলেও সেখানে নেই কোনো ওভেন, ইলেকট্রিক কেটলি। অথচ প্রতি রাতের জন্য এই কটেজের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ছয় হাজার টাকা।
এর বাইরে আলাদা আরেকটি স্থাপনায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ৬০ আসনবিশিষ্ট রেস্তোঁরা আছে এই রিসোর্টে। এছাড়া একটি অভ্যর্থনা ভবন, যার নিচতলায় অভ্যর্থনা কাউন্টার, তিনটি স্যুভেনির শপ, একটি কফি কর্নার। যদিও স্যুভেনির শপ আর কফি কর্নার এখনো চালু হয়নি। রিসোর্টে দুটি দোলনা ছাড়া শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় কোনো রাইডও নেই।
সালনা রিসোর্ট অ্যান্ড পিকনিক স্পট ইউনিটের ব্যবস্থাপক শাহজাহান কবীর বলেন, এই রিসোর্টে গ্রুপ ট্যুরিস্টদের ডে-আউটিংয়ের জন্য দুটি পিকনিক শেড ও একটি কুকিং শেড রয়েছে, যেখানে ২০০-৩০০ লোকের সব ধরনের খাবার প্রস্তুত করা যাবে। আরও কিছু কাজ বাকি থাকায় এখনো রিসোর্টটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি।
সব কাজ শেষ না করে কেন উদ্বোধন করা হয়েছে- এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি তিনি।
সালনা রিসোর্ট অ্যান্ড পিকনিক স্পটের এমন বর্ণনা শুনে অবাক হয়েছেন ট্যুরিজম রিসোর্ট ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ট্রিয়াব) সভাপতি খবির উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, রিসোর্টের কনসেপ্ট এসেছে খোলামেলা পরিবেশে বিনোদন ও খেলাধুলাসহ উপভোগের নানা আয়োজন থেকে। কিন্তু সালনা রিসোর্টে সুইমিংপুল, জিম, বার, স্পা সেন্টার, প্লে গ্রাউন্ড কিছুই নেই। অথচ রিসোর্টে মানুষ আসে বড় পরিসরে বেশি কিছু উপভোগ করতে। সালনা রিসোর্ট কতটা ব্যবসা সফল হবে সে প্রশ্ন রয়ে যায়।
জানতে চাইলে পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. আলি কদর জাগো নিউজকে বলেন, সালনার প্রাকৃতিক পরিবেশ ও মহাসড়কের পাশে হওয়ায় রিসোর্টটি জনপ্রিয় হবে। আমরা সেখানে একটি সুইমিংপুলের ব্যবস্থা করবো। আরও কিছু অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করবো।
গত ৫ সেপ্টেম্বর সালনা পর্যটন রিসোর্ট অ্যান্ড পিকনিক স্পট উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী। তিনি বলেন, দেশে পর্যটনখাতের উন্নয়নে আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। যতটুকু করার কথা ততটুকু করতে পারি না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পর্যটনকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় আমরা সেভাবে কাজ করছি। পর্যটনখাতের বিকাশে যে জিনিসটা দরকার তা হচ্ছে সবার এগিয়ে আসা ও বিনিয়োগ।