সম্প্রতি বিএনপির সমাবেশে জাতীয় পতাকা লাগানো বাঁশের লাঠি নিয়ে মারামারি করতে দেখা গেছে দলটির নেতাকর্মীদের। বাঁশের মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে মারামারির ভিডিও-ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন ভাইরাল।
ভিডিও-ছবিতে দেখা যায়, লাঠির মাথায় বাঁধা পতাকা মাটিতে যত্রতত্র পড়ে আছে। কেউ কেউ টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছেন পতাকা। আবার সংঘর্ষের সময় পায়ে পদদলিত হচ্ছে জাতীয় পতাকা। বিএনপির নেতাকর্মীদের হাতে বাঁশের লাঠির সঙ্গে জাতীয় পতাকার অবমাননা কিসের আলামত? এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত সংঘর্ষের সময় লাঠি ব্যবহার করার জন্যই ব্যবহার করা হচ্ছে জাতীয় পতাকা, যা অবমাননাকর।
গেল তিন মাসে বিএনপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে দলটির নেতাকর্মীরা। এসব সংঘর্ষে পতাকা ধরে রাখার আবশ্যিক উপাদান হিসেবে মিছিল-সমাবেশে ঢুকছে লাঠি, কাঠ ও বাঁশ, যা ব্যবহার হচ্ছে সংঘর্ষে।
সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর হাজারীবাগে বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে আওয়ামী লীগ কর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া হয়। ওই মিছিলে বিএনপি কর্মীদের হাতে দেখা যায় পতাকা লাগানো বাঁশের লাঠি। প্রথমে মুখোমুখি অবস্থান, এরপর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, এক পর্যায়ে লাঠিপেটা।
ওই সংঘর্ষের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বিএনপি কর্মীরা পতাকা থেকে একে একে লাঠি খুলে সাংবাদিকসহ অপর পক্ষের কর্মীদের ওপর চড়াও হয়। এরপর কয়েকজনকে মারধরের দৃশ্যও দেখা যায়।
সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে দমন-পীড়নের অভিযোগ তুলে বিএনপি নেতারা বলেন, আঘাত এলে পাল্টা আঘাত করা হবে। দাবি আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান বিএনপি নেতারা।
এ বিষয়ে বিএনপির ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) কমিটির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেন, লাঠি আমরা নিতে চাই না, আওয়ামী লীগ যদি বাধ্য করে তাহলে তো লাঠি নিতেই হবে বাঁচার জন্য। অস্ত্র নিয়ে ঘুরবেন, গুলি করবেন আর আমরা কি মার খাবো? মার দিলে মার খেতে হবে পরিষ্কার কথা।
বিএনপির নেতাকর্মীদের হাতে বাঁশের লাঠির সঙ্গে জাতীয় পতাকা কিসের আলামত? এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা বলছেন, এটা কি জাতীয় পতাকার অবমাননা নয়?
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু বলেন, নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে জনগণের সম্পৃক্ততা লাগে। কিন্তু বিএনপি জনগণের সম্পৃক্ততায় ব্যর্থ। তাই তারা আন্দোলনের নামে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। তারা আজ রাস্তায় লাঠিসোঠা নিয়ে নেমেছে।
এরআগে এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্দোলনের নামে রাজপথে আবারও সহিংসতা ও সন্ত্রাস সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে বিএনপি। আজকাল বিএনপির নেতাকর্মীদের হাতে বাঁশের লাঠির সঙ্গে জাতীয় পতাকা দেখা যাচ্ছে। এটা কিসের আলামত? এটা কি জাতীয় পতাকার অবমাননা নয়?
শান্তি সমাবেশে কেন পতাকার সঙ্গে লাঠি? এমন প্রশ্ন তুলেছে খোদ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী। তাদের দাবি, পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, একটা শান্তিপূর্ণ সমাবেশে তো লাঠির কোনো প্রয়োজন নেই। আমি যখন লাঠি দেখতে পেয়েছি তখন তাদেরকে বলেছি লাঠিগুলো সরিয়ে ফেলেন। কারণ, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে লাঠি নিয়ে এলে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
এ বিষয়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক শহীদুল হক বলছেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কখনোই পুলিশ বাধা দেয় না। উসকানির মাধ্যমে ইস্যু তৈরি করতে চায় সহিংসতাকারীরা। অতীতের আন্দোলনগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বিরোধী দলের আন্দোলনকারীরা পুলিশকে টার্গেট করে। পুলিশকে নানাভাবে উসকানি দেয়া হয়। এর একটা লক্ষ্য হলো, তারা পেশিশক্তি প্রয়োগ করে জনগণের কাছে প্রমাণ করতে চায় যে তারা অনেক শক্তিশালী। আরেকটা লক্ষ্য হলো, তারা পুলিশকে উসকানি দিয়ে অ্যাকশনে ইনভাইট করে। সংঘর্ষ হলে আহত ও নিহত হওয়ার কোনো ঘটনা ঘটে। এতে তারা একটা ইস্যু পেয়ে যায়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ অ্যাকশনে যেতে পারে, তবে সেটিও হতে হবে আইন মেনে। সেই সঙ্গে সভা-সমাবেশ থেকে পুলিশকে উসকানি দেয়া থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি পুলিশকে আরও সহনশীল হওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান কার্জন বলেন, জনগণকে নিরাপত্তা দিতে সন্ত্রাসী বা সহিংসতাকারীদের দমন করতে হবে। মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই পুলিশের প্রধান কাজ। কিন্তু সেই দায়িত্বটা পালন করতে গিয়েও তারা যা খুশি তা করতে পারে না। সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে আইন অনুযায়ী স্তরে স্তরে অগ্রসর হতে হবে। পরিস্থিতি অনুযায়ী, যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু শক্তি প্রয়োগ করতে হবে।