বাস্তবের অনেক কাহিনী সিনেমাকেও হার মানায়। আর যখন সত্যি সত্যি হার মানায় তখন তা তৈরি করে শিরোনাম। অপরাধের এমনই এক কাহিনী এবার প্রকাশ্যে আসলো।
আট বছর ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত এক আসামি। অন্যদিকে মাসিক পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে তার হয়ে চার বছর ধরে সাজা খেটেছেন ফুপাতো ভাই।
এ যেন পুরোই আয়নাবাজি। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না সেই আসামির। এতদিন পর পালিয়ে থাকা সেই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব
রোববার (৩০ জানুয়ারি) রাজধানীর মিটফোর্ড এলাকা থেকে হত্যা মামলার আসামি সোহাগকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানান র্যাব-১০ এর অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান।
রোববার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আসল সোহাগের পরিবর্তে সাজা ভোগ করা নকল সোহাগের নাম মোঃ হোসেন।
২০১০ সালে রাজধানীর কদমতলী থানায় দায়ের করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে জেলে যান সোহাগ ওরফে বড় সোহাগ (৩৪)। কিছুদিন পর জামিনে বেরিয়ে পলাতক হন তিনি।
পরে নিজেকে রক্ষায় টাকার বিনিময়ে একজনকে সোহাগ বানিয়ে আত্মসমর্পণ ও জামিন আবেদন করান। কিন্তু জামিন নামঞ্জুর করে আদালত ‘নকল সোহাগ’কে জেলে পাঠিয়ে দেয়।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, মাদকাসক্ত হোসেন ওরফে নকল সোহাগ প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে জেলহাজতে যায়। সম্পর্কে ফুফাতো ভাই হোসেন সাত বছর জেল খেটেছেন।
এর মধ্যে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে পাসপোর্টও তৈরি করে আসল সোহাগ। দুবাই যাওয়ার সব প্রস্তুতিও ছিল তার। তবে বিদেশ যেতে প্রয়োজন হয় করোনার সনদ।
গত শনিবার টিকা নিতে মিটফোর্ড হাসপাতালে যান তিনি। আর তখনই র্যাবের হাতে ধরা পড়েন দীর্ঘ দিন ধরে পলাতক থাকা যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সোহাগ ওরফে বড় সোহাগ।
২০১০ সালের ২৬ নভেম্বর দুপুরে ঢাকার কদমতলীর নোয়াখালী পট্টিতে নান্নু জেনারেল স্টোরের সামনে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হুমায়ুন কবির নামের এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে দায়ের করা মামলার মূল আসামি সোহাগ। ওই বছরের ২২ ডিসেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২০১৪ সালের ১৬ মে জামিনে মুক্তি পান সোহাগ।
জামিনের মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই পলাতক রয়েছেন তিনি। পরে ২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর পলাতক সোহাগ ওরফে বড় সোহাগের অনুপস্থিতিতে আদালত রায় প্রকাশ করে।
সোহাগ ওরফে বড় সোহাগের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয় আদালত।
রায়ের পর দণ্ডপ্রাপ্ত সোহাগ তার পরিকল্পনা অনুযায়ী তার ফুফাতো ভাইকে হোসেনকে ‘সোহাগ’ বানিয়ে ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি তাকে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চায়।
আদালত জামিন না দিয়ে নকল সোহাগকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। তিন মাসের মধ্যে জামিনের আশ্বাস আর প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে জেল খাটতে রাজি হয় হোসেন।
র্যাব জানায়, হোসেন ওরফে নকল সোহাগ (৩৫) মাদকাসক্ত হওয়ায় বাল্যকাল থেকে আসল সোহাগের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে উঠে।
আসল সোহাগ নকল সোহাগকে (হোসেন) জেলহাজতে পাঠানোর আগে ২-৩ মাসের মধ্যে বের করে নিয়ে আসবে বলে আশ্বস্ত করে। সাত বছর পর নকল সোহাগের আসল পরিচয় বের হয়।
বিষয়টি বুঝতে পেরে কৌশলে দেশত্যাগের চেষ্টা শুরু করেন আসল সোহাগ। এর জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র পরিবর্তন করে পাসপোর্ট তৈরি করে আরব আমিরাতের ভিসা সংগ্রহ করেন তিনি।
দেশত্যাগের ক্ষেত্রে করোনার টিকা বাধ্যতামূলক হওয়ায় ২৯ জানুয়ারি করোনার দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার জন্য সলিমুল্লাহ মেডিকেল মিডফোর্ড হাসপাতাল আসেন সোহাগ।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-১০ এর অপারেশন টিম র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার সহযোগিতায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে সোহাগকে গ্রেপ্তার করে।
র্যাব জানায়, কারাগারে থাকা সোহাগের ভাইয়ের বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযোগ আনা হবে। আর সোহাগকে আদালতের কাছে দেয়া করা হবে। আদালত পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে।