গাছগুলো ড্রাগন ফুল আর কাঁচা-পাকা ফলে ভরে গেছে। থোকায় থোকায় ঝুলছে লাল, হলুদ রঙের ফলগুলো। পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ হওয়ায় এ বিদেশি ফলের চাহিদা রয়েছে দেশের বাজারে। প্রতি বিঘায় খরচ হয় ৪০ হাজার, তবে লাভ হয় এক লাখ টাকা।
বাণিজ্যিকভাবে এ ড্রাগন ফলের চাষ করেছেন চুয়াডাঙ্গার দর্শনা গয়েরপুর গ্রামের সফল চাষি উজ্জ্বল হোসেন। তিনি প্রায় ৮০ হেক্টর জমিতে ড্রাগন চাষ করে সফল হয়েছেন।
লাভজনক ও সম্ভাবনাময় এ ফল চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন তরুণ উদ্যোক্তারাও। চুয়াডাঙ্গার মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় খুব সহজে ড্রাগনের বিদেশি বিভিন্ন জাত চাষ করছেন কৃষকরা।
জানা গেছে, ২০১৭ কৃষি উদ্যোক্তা উজ্জল হোসেন ড্রাগন ফলের ৭টি জাত দিয়ে বাগান শুরু করেন। বিদেশ থেকে ফিরে কর্মহীন হয়ে পড়েন তিনি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরামর্শে গ্রামে ড্রাগন ফলের বাগান গড়ে তোলেন সাড়ে তিন বিঘা জমিতে তিন হাজার গাছ দিয়ে। বাগানে রয়েছে উচ্চ ফলনশীল জাতের থাইল্যান্ডের রেড ভেলভেট জাতের ড্রাগন ফলের গাছ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সহজে ড্রাগন চাষ সম্ভব হচ্ছে।
বাগানে রয়েছে রেড ভেলভেট, আমেরিকান বিউটি, ভিয়েতনামের তিনটিসহ ৭টি জাতের ড্রাগন গাছ। গাছ লাগানোর পর ফুল আসলেও ১৪ মাসে পরিপূর্ণ ফল ধরে। বৈশাখ মাসে গাছে ফুল আসতে শুরু করে। এরপর একটানা ৬ মাস পর্যন্ত গাছ থেকে ফল পাওয়া যায়। পোকামাকড়, রোগবালাই ও পাখি থেকে রক্ষা করতে ব্যাগিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
বিদেশি জাতের এ ফলটি পাকলে বাইরের ও ভেতরের রঙ টক টকে লাল। আর হলুদ ফলের ভেতরের রঙ সাদা। ড্রাগন ফলটি খেতে সুস্বাদু, মিষ্টি ও রসাল। বর্তমানে ড্রাগন ফলের চাহিদা অনেক বেশি। প্রতি কেজি ফল ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বাজারে। প্রতিটি খুঁটির গাছ থেকে ৮০-৮৫টি ফল পাওয়া যায়। প্রতি বিঘায় খরচ হয় ৪০ হাজার টাকা। বাগানে ১৫ বিঘা জমিতে ড্রাগনের রেড ভেলভেট জাতের প্রায় ২২ হাজার গাছ রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গার দর্শনা গয়েরপুর গ্রামের ড্রাগন মালিক উজ্জ্বল হোসেন বলেন, বিদেশ থেকে দেশে ফিরে বেকার হয়ে যায়। আর ছোট ভাই জমি বিক্রি করে বিদেশ যাওয়ার পরিকল্পনা নেন। কিন্তু কৃষি অফিসের পরামর্শে প্রথমে তিন বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ শুরু করি নিজ গ্রামে। এরপর দেখি ড্রাগন চাষ লাভজনক। প্রতি বিঘায় খরচ ছাড়া লাভ হয় প্রায় এক লাখ টাকা। বছরে ৬ মাস ফল পাওয়া যায়। আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করায় ফলন অনেক ভালো। বাগানে ১৫ শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, ড্রাগন বিদেশি ফল হলেও দেশের মাটিতে চাষ হচ্ছে। পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ সুস্বাদু ফল। এ চাষে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে। জেলার কৃষি সমৃদ্ধ হচ্ছে।