দিনাজপুরে চলতি বছরে হত্যার শিকার হয়েছেন ৪৫ জন এবং অজ্ঞাতপরিচয়ে মরদেহ উদ্ধারসহ অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে সাত শতাধিক বলে জানিয়েছে পুলিশ প্রশাসন।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, সামাজিক অবক্ষয়, মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় এসব হত্যাসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পুলিশ জানায়, গত ১০ দিনের ব্যবধানে জেলায় ঘটেছে চার হত্যাকাণ্ড। এর মধ্যে বিরলে বাবার হাতে দুই শিশু খুন, বীরগঞ্জে জমি সংক্রান্ত বিরোধে এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যা এবং সবশেষ খানসামা উপজেলায় ৮ বছরের শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে বাড়ির আঙিনায় পুঁতে রাখা হয়।
দিনাজপুর জেলা পুলিশের হিসাবমতে, ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলায় ৪৫টি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে চার, ফেব্রুয়ারিতে চার, মার্চে পাঁচ, এপ্রিলে দুই, মে মাসে চার, জুনে চার, জুলাইয়ে চার, আগস্টে চার, সেপ্টেম্বরে তিন, অক্টোবরে পাঁচ, নভেম্বরে তিন এবং ডিসেম্বর মাসের এ পর্যন্ত তিনজন হত্যার শিকার হয়েছেন।
এ ছাড়াও চলতি বছরের এ পর্যন্ত অপমৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছে সাত শতাধিক। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ৩৯টি, ফেব্রুয়ারিতে ২৪, মার্চে ২২, এপ্রিলে ৫৮, মে মাসে ৭৮, জুনে ৯১, জুলাইয়ে ৮৫, আগস্টে ৮২, সেপ্টেম্বরে ৮৫, অক্টোবরে ৬৬, নভেম্বরে ৬৪ এবং চলতি ডিসেম্বর মাসের এ পর্যন্ত ৬টিরও বেশি। এসব অপমৃত্যুর কোনো কোনো মামলায় মৃত্যুর ঘটনা রয়েছে একাধিক। অর্থ্যাৎ একটি মামলায় একাধিক মৃত্যুর ঘটনাও রয়েছে।
দিন দিন এসব অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার পেছনে সামাজিক অবক্ষয়, আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে অপরাধী বেড়িয়ে যাওয়াসহ নানান কারণকে দায়ী বলে মনে করছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট দিনাজপুরের সভাপতি সুলতান কামালউদ্দীন বাচ্চু বলেন, সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধের যে চরম অবক্ষয়, সেটা থেকে আমরাও পরিত্রাণ পাচ্ছি না। সারা দেশে যেভাবে শিশু নির্যাতন, নারী নির্যাতন, হত্যা বেড়েছে, তাতে আমাদের সরল জেলা দিনাজপুরও বাদ নেই। ইদানিং দিনাজপুরে যেসব ঘটনা ঘটেছে, তা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, রাজনৈতিক অস্থিরতাও এসব বিষয়ের সঙ্গে জড়িত। এ জন্য সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতাকে এ বিষয়ে এগিয়ে যাওয়া উচিৎ বলে মনে করেন তিনি।
সমাজকর্মী মকিদ হায়দার বলেন, যারা অপরাধমূলক এসব কর্মকাণ্ড করছে, তারা নিশ্চিত হয়ে গেছে-যে কোনোভাবে আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে তারা বের হয়ে যাবে। এজন্যই অপরাধ ঘটনাতে তাদের মধ্যে ভয় কাজ করছে না। আমাদের আইন ব্যবস্থাপনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হলে এসব অপরাধপ্রবণতা হ্রাস পাবে বলে মনে করেন সমাজকর্মী মকিদ হায়দার।
দিনাজপুর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রবিউল ইসলাম রবি বলেন, বেশিরভাগ হত্যাকাণ্ড ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটছে মাদকাসক্তের কারণে। মাদকাসক্তের কারণে বিবেক লোপ পাওয়ায় এসব হত্যাকাণ্ড ঘটছে। তবে প্রশাসন এ ব্যাপারে সজাগ থাকার কারণে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে বলে জানান তিনি।
দিনাজপুরের সদ্য বিদায়ী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আসলাম উদ্দীন জানান, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অপরাধীরা যেভাবে কৌশল পরিবর্তন করছে, তেমনি পুলিশও প্রযুক্তির ব্যবহার করে তাদের ধরতে সক্ষম হচ্ছে। দিনাজপুরে প্রায় সব হত্যাকাণ্ডের রহস্যই উদঘাটন করা সম্ভব হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসলাম উদ্দীন।