ছবি: সংগৃহীত
দীর্ঘদিন পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় লোকনাথ ট্যাংকেরপাড় ময়দানে অনুষ্ঠিত হলো দেশের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী জাতীয় খেলা কাবাডি প্রতিযোগিতা। হারিয়ে যাওয়া এই খেলা উপভোগ করতে মাঠে জড়ো হন বিভিন্ন বয়সী ক্রীড়ামোদী দর্শক। মুহুর্মুহু করতালি দিয়ে প্রতিযোগীদের উৎসাহিত করেন তারা। প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া (সদর)-৩ আসনের সংসদ সদস্য র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী।
একসময় কাবাডি বাঙালির জনপ্রিয় খেলা ছিল। জনপ্রিয়তার উৎকর্ষ থেকে এটি বাঙালির জাতীয় খেলায় পরিণত হয়। কিন্তু বর্তমান বিশ্বায়নের প্রভাবে ঐতিহ্যবাহী এ খেলাটি গ্রামগঞ্জে আর তেমন দেখা মেলে না। তবে প্রতিবারের মতো এবারের বিজয় দিবস উপলক্ষে হারিয়ে যাওয়া এ খেলাটির আয়োজন করেছে জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও জেলা প্রশাসন।
উদ্বোধনী ম্যাচে উচ্চ বিদ্যালয় পর্যায়ে মেয়ে শিক্ষার্থীরা সংঘবদ্ধভাবে তাদের প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে ঝাপটে ধরেন। এ সময় উত্তেজনাপূর্ণ মুহূর্তে উভয় পক্ষের দর্শক মুহুর্মুহু করতালি দিয়ে উৎসাহ জোগান। এ সময় প্রতিযোগী ও দর্শকরা আগামী দিনে এমন আয়োজন আরও বেশি-বেশি করার দাবি জানান।
প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া লাল দলের অধিনায়ক সিনথিয়া আফরোজ বলেন, ‘অনেক বছর ধরেই আমি কাবাডি খেলছি। এবারের খেলায় অংশগ্রহণ করে আমাদের খুব ভালো লাগল। আশা করি এ ধরনের আয়োজন আরও বেশি বেশি হবে এবং মেয়েরা এগুলোতে অংশগ্রহণ করবে। বাংলাদেশের মেয়েদের এগিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। সে জন্য এই খেলা অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে।’
সবুজ দলের অধিনায়ক শান্তা আক্তার রিসা বলেন, ‘আমি চাই কাবাডি খেলায় আমাদের মেয়েদের আগ্রহ আরও বাড়ুক। এমন আয়োজন যেন সবসময় করা হয় সেই দাবি জানাচ্ছি। মেয়েদের যেন সবাই উৎসাহ দেয় এবং সবার পরিবার যেন সাপোর্ট করে সেই কামনা করছি।’
এদিকে খেলা দেখতে আসা দর্শক হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘এ খেলা বাংলাদেশের জাতীয় খেলা। দীর্ঘদিন পর এ খেলা দেখে আমাদের অনেক ভালো লেগেছে। আশা করি এমন আয়োজন আরও হবে। যত বেশি আয়োজন হবে খেলার প্রতি মানুষের আগ্রহও তত বেশি বাড়বে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী মন্টু বলেন, ‘বিগত দিনগুলোতে ক্রীড়া সংস্থা এ খেলার আয়োজন করেছে। আগামী বছরও একইভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে এমন আয়োজন করা হবে। কারণ, আমাদের আগামী প্রজন্মকে মাদক থেকে দূরে রাখার জন্য খেলার বিকল্প কিছু হতে পারে বলে মনে করছি না।’
প্রধান অতিথি উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেন, “আমাদের কাছে বিজয় দিবস যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনিভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলো ‘জয় বাংলা’। ‘জয় বাংলা‘ তারাই বলে না, যাদের ভেতরে পাকিস্তানি প্রেতাত্মা আছে। ‘জয় বাংলা’ তারাই বলে যারা পাকিস্তানিদের কবর দিয়েছে এবং বাংলাদেশকে মেনে নিয়েছে। যাদের জন্ম বাংলাদেশে এবং যারা তরুণ, তাদের কোনো কারণ নেই ‘জয় বাংলা’ না বলার। আমরা আশা করব, যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন বাংলাদেশে ‘জয় বাংলা’ থাকবে। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন বিজয় দিবস থাকবে। বিজয়ের মাস থাকবে। এ নিয়েই আমরা এগিয়ে যেতে চাই। আমাদের জীবনকে গড়ে তুলতে চাই।”
কাবাডি প্রতিযোগিতায় মোট ১১টি দল অংশগ্রহণ করেছে। উদ্বোধনী ম্যাচে মেয়েদের লাল দল ১৮ পয়েন্ট পেয়ে সবুজ দলকে পরাজিত করে।