মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডের চিত্র। ছবি সংগৃহীত
তিন দিনের জ্বরে কাহিল ঊনচল্লিশ বছর বয়সী শাহজাদা। একপর্যায়ে শারীরিক পরিস্থিতির আরও অবনতি শুরু হলে ভর্তি হন মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে রক্ত পরীক্ষায় ধরা পড়ে ডেঙ্গু।
একই হাসপাতালে ভর্তি ১১ বছর বয়সী সোহানা। জ্বরের ষষ্ঠ দিনে এসে বমির সঙ্গে শুরু হয় রক্ত যাওয়া। কিছু খেতে না পারায় অভিভাবকদের বাড়ছে দুশ্চিন্তা। বাড়ছে শঙ্কা।
হাসপাতালে সোহানার নানী জানান, কয়েকদিনের জ্বরের পর বমির সঙ্গে রক্ত পড়া শুরু হলে উপায় না দেখে সোহানাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
আর শাহজাদা স্ত্রী জানান, শরীর কেঁপে কেঁপে জ্বর বারবার জ্বর আসছিল তার স্বামীর। গালের ভেতরে ঘা হয়ে গেছে। কিছু খেতে পারে না।
এদিকে আগের ভয়াবহতা ছাড়িয়ে যাওয়ার শঙ্কা ডেঙ্গুর। হুহু করে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়লেও কোনো উদ্যোগেই দমানো যাচ্ছে না ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা। হাসপাতালে প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর চাপ। ডেঙ্গু রোগী বাড়তে থাকায় হাসপাতালে এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে শয্যা সংকট। সেই সঙ্গে রোগীর অতিরিক্ত চাপে নাকাল চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. নিয়াতুজ্জামান বলেন,
দুশ্চিন্তাযুক্ত একটি চিত্র। হাসপাতালের তিনটি ডেঙ্গু ওয়ার্ড সচল রাখতে আমার পর্যাপ্ত নার্স, চিকিৎসক, ক্লিনার দরকার। পর্যাপ্ত ওয়ার্ড থাকলে আমাদের ম্যানপাওয়ারের সংকট রয়েছে।
ডেঙ্গুর এমন ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও থেমে নেই দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের একে অপরকে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি। এডিস নিয়ন্ত্রণ স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব উল্লেখ করে সিটি করপোরেশনকে মশা নিধনে আরও মনোযোগী হওয়ার আহ্বান স্বাস্থ্যমন্ত্রীর। মশা নিধনে ব্যর্থতার জন্য সিটি করপোরেশনকে দুষছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, আমাদের স্বাস্থ্যসেবা আমরা দিয়ে যাচ্ছি। হাসপাতালগুলো রোগীতে ভরে যাচ্ছে। সেজন্য ডেঙ্গুতে মৃত্যুরোধ করতে দ্রুত এডিস মশা নিধন করা প্রয়োজন।
তবে এডিস মশা পুরোপুরি নির্মূল সম্ভব নয় জানিয়ে চিকিৎসার পরিধি বাড়াতে স্বাস্থ্য বিভাগকে কাজ করার কথা বললেন ঢাকা দক্ষিণ দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
তাপস বলেন, একজন রোগী যাতে মৃত্যুর শঙ্কা অবস্থায় না যায় সেজন্য প্রাক চিকিৎসা কার্যক্রম নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে আমরা মৃত্যুর হার কমাতে পারব।
তবে সংকটের সময় একে অপরকে দোষারোপের মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে সমন্বয়ের সঙ্গে মশা নিধনের আহ্বান জানান বিশেষজ্ঞরা।
সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ বলেন,
২০০০ সালে আমাদের দেশে ডেঙ্গু দেখা দিলেও গত ২৩ বছরে তা নিধন করা সম্ভব হয়নি। আমার মনে হচ্ছে স্থানীয় সরকার বিভাগ দিয়ে এটা হবে না। যেরকম ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে স্বাস্থ্য বিভাগ, তেমনি ডেঙ্গু একটি বাহক জনিত রোগ। তাই তারা দেশজুড়ে স্বাস্থ্য বিভাগের এটি নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
সারাদেশে এরই মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৯ হাজার এবং মৃত্যুর সংখ্যা ৬১। এর মধ্যে গত ৩ ও ৪ জুলাই ডেঙ্গুতে সারা দেশে মারা গেছে যথাক্রমে ৪ ও ৫ জন।