বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে উপস্থিতি বাড়ানোর প্রচেষ্টার চালাচ্ছে চীন। তবে চীনের এ প্রচেষ্টা মোকাবিলায় বাংলাদেশকে তার উপকূলকে একটি অর্থনৈতিক কেন্দ্রে পরিণত করতে সহায়তা করছে জাপান। দ্য ইকোনমিক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই পদক্ষেপটি এই অঞ্চলের অর্থনীতিতেও পরিবর্তন আনতে পারে।
বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জাপানের নেতৃত্বে বাংলাদেশে পুরোদমে একটি উপকূলীয় অর্থনৈতিক করিডোর তৈরির কাজ চলছে। যা একটি পাওয়ার প্লান্ট, বন্দর এবং কর্পোরেট পার্ক নিয়ে গঠিত। এটাকে এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব বিস্তার ঠেকাতে জাপানের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
জাপানি প্রকল্পগুলি স্থলবেষ্টিত উত্তর-পূর্ব ভারতকে বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করবে এবং একইসঙ্গে স্থানীয় বাজারগুলিতে ট্যাপ করবে৷ এদিকে চীন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার হয়ে বঙ্গোপসাগরে স্থায়ী উপস্থিতির দিকে নজর রাখছে।
বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট (বিআইজি-বি) এর উদ্যোগের অধীনে, জাপান ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার বেল্ট এলাকায় সংযোগ উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং শিল্প প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
বিআইজি-বি উদ্যোগের লক্ষ্য বাংলাদেশ এবং এর প্রতিবেশী দেশ ভুটান, নেপাল এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধি করা এবং এটিকে আঞ্চলিক অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই উদ্যোগের আওতায় জাপান চট্টগ্রামে মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর, কয়লা ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং মাতারবাড়িতে একটি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল তৈরি করছে।
রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম ফর ডেভেলপিং কান্ট্রিজ (আরআইএস) এমইএ-র অধ্যাপক প্রবীর দে। তিনি উত্তর-পূর্ব ভারত, বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সংযোগ প্রকল্প নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি দ্য ইকোনমিক টাইমসকে বলেন, বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ দ্রুত বাড়ছে। বেশিরভাগ জাপানি টেক্সটাইল ও ফুড কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে ইউনিট খুলেছে। কক্সবাজারের কাছে মাতারবাড়িতে একটি নতুন গভীর সমুদ্র বন্দর ও অর্থনৈতিক অঞ্চল ২০২৪ সালের মধ্যে প্রস্তুত হতে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এই উন্নয়নকে জাপানের নতুন এফওআইপি-এর অংশ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ভারত বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতেও প্রচুর বিনিয়োগ করছে, যার ফলে উত্তর-পূর্ব ভারত ও পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে তার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ জোরদার হচ্ছে। বাংলাদেশ-ভারত-জাপান ত্রিপক্ষীয় অংশীদারিত্বের উচ্চ সম্ভাবনা রয়েছে।
জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) পণ্য পরিবহনের সুবিধার্থে মহেশখালী-মাতারবাড়ি এলাকা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এটি ঢাকার সঙ্গে রেল, সড়ক ও অভ্যন্তরীণ নৌপথে যুক্ত হবে।
বাংলাদেশ জাইকার সহযোগিতায়, ঢাকার উপকণ্ঠে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে একটি জাপানি ইপিজেডও গড়ে তুলছে, যেখানে কৃষি-খাদ্য, হালকা প্রকৌশল, রাসায়নিক, অটোমোবাইল সমাবেশ, গার্মেন্টস এবং ওষুধ শিল্পের উৎপাদন ইউনিট থাকবে।
এই অঞ্চলের সঙ্গে জাপানের ঐতিহাসিক সম্পর্ক এবং নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সীমানা ভাগ করে নেয়ার কারণে উত্তর-পূর্ব ভারত জাপান ও ভারতের মধ্যে সহযোগিতার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে ইতিমধ্যে জাপানের একটি বড় উপস্থিতি রয়েছে। যেহেতু ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলটি অনুপস্থিত লিঙ্ক, জাপান সেই ব্যবধান পূরণের লক্ষ্যে সেখানে বিনিয়োগ করছে।