লিথুয়ানিয়ার ভিলনিয়াসে ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির করমর্দন। ছবি: সংগৃহীত
পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোয় যোগ দেয়ার সিদ্ধান্তের কারণে গত বছরের শুরুতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। কিয়েভের প্রতিরোধ লড়াইয়ের মধ্যদিয়ে যা রক্তক্ষয়ী সংঘাতে রূপ নেয় এবং গত ১৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে অব্যাহত রয়েছে।
কিন্তু এরপরও সেই সিদ্ধান্ত থেকে একচুল নড়েনি ইউক্রেন। ন্যাটোয় যোগ দেয়ার জন্য জোর কূটনৈতিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দেশটির নেতা ভলোদিমির জেলেনস্কি।
ইউক্রেনে চলমান রক্তক্ষয়ী সংঘাতের মধ্যেই চলতি সপ্তাহে রাশিয়ার সীমান্ত ঘেষা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশ লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে আয়োজন করা হয় ন্যাটোর বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন।
এই সম্মেলনকে সামনে করে ইউক্রেনীয় নেতারা ন্যাটোর সদস্য হওয়ার ব্যাপারে আরও বেশি করে আশাবাদী হয়ে ওঠে। এ ব্যাপারে একটা ‘ইতিবাচক বার্তা’ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় জোটের নেতা জেন্স স্টলটেনবার্গও।
গত মঙ্গলবার (১১ জুলাই) রাশিয়ার নাগের ডগায় লিথুয়ানিয়ার ভিলনিয়াসে শুরু হয় ন্যাটোর দুদিনব্যাপী শীর্ষ সম্মেলন। জোটের সবচেয়ে প্রভাবশালী সদস্য দেশ হিসেবে সম্মেলনে যোগ দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও।
বাইডেনের এই ইউরোপ সফর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার অন্যতম হাই-প্রোফাইল কূটনৈতিক সফর। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ইউক্রেনকে সেই শুরু থেকেই সব ধরনের সহায়তা আসছে পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র।
এর ফলে ওয়াশিংটন-কিয়েভ সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছিল। ভিলনিয়াস সম্মেলনের মধ্যদিয়ে ন্যাটোর প্রধানসহ আরও অনেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যকার সম্পর্কের একটা চমকপ্রদ প্রদর্শনী দেখতে চেয়েছিল।
কিন্তু তার পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্র তথা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে ইউক্রেনীয় নেতা জেলেনস্কির সম্পর্কে বেশ কিছু ফাটল প্রকাশ হয়ে পড়েছে। ইউক্রেনকে জোটের সদস্য করা-না করা নিয়ে বাইডেন ও জেলেনস্কির বক্তব্যেই সেটা স্পষ্ট হয়েছে।
ইউক্রেনকে সদস্য করার ব্যাপারে ন্যাটো সম্মেলন থেকে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। নেতারা বলেছেন, ইউক্রেনকে সদস্য করার ব্যাপারে কোনো সময়সীমা দেয়া সম্ভব নয়।
নেতাদের এমন বক্তব্যে ক্ষুব্ধ জেলেনস্কি বলেছেন, তার দেশকে জোটের অন্তর্ভূক্ত করার ব্যাপারে নেতাদের মধ্যে ‘আন্তরিকতার অভাব’ রয়েছে। আর এ কারণেই রাশিয়া তার দেশে ‘সন্ত্রাস চালিয়ে যেতে’ পারছে। বর্তমানে ন্যাটোর সদস্য ৩২টি হলেও সামরিক এ জোটের লাগাম যুক্তরাষ্ট্র তথা বাইডেনের হাতেই।
ইউক্রেনকে গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সদস্য করার আশ্বাস দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা। চলমান যুদ্ধ ও সংঘাতের মধ্যে দেশটি যখন সদস্য হওয়ার জন্য আরও উদগ্রীব, তখন শেষ পর্যন্ত হতাশই হতে হলো দেশটির নেতাদের।
ন্যাটো প্রধান ‘ইতিবাচক বার্তা’ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও ইউক্রেন যে এবারও ‘সুখবর’ পাবে না, তা ভিলনিয়াস সম্মেলনের আগেই বাইডেনের এক সাক্ষাৎকার থেকে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বাইডেন সরাসরিই বলেন যে, ‘ন্যাটোর সদস্য হওয়ার জন্য এখনও প্রস্তুত নয় ইউক্রেন’। অতপর ভিলনিয়াস সম্মেলনে আগের সেই বক্তব্যই আরও পরিস্কার করেন তিনি।
ন্যাটোর অন্যান্য নেতাদের উদ্দেশে দেয়া বক্তব্যে বাইডেন বলেন, যুদ্ধরত কোনো দেশকে সদস্য হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। অর্থাৎ রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধাবস্থায় ইউক্রেনকে সদস্য করা হবে না। তবে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে এটাও বলেন যে, ন্যাটোর কোনো এক সদস্য দেশের সঙ্গে যুদ্ধ মানে ন্যাটোর সঙ্গেই যুদ্ধ।
বাইডেনের বক্তব্যের এই পয়েন্টটাই এরপর যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবির মুখে শোনা গেল। তিনি বলেন, ইউক্রেনের অন্তর্ভূক্তি ‘সম্ভব নয়’। তবে বিষয়টাকে ‘হতাশা’র বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সূত্র: দ্য হিল, সিএনএন ও দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট