ছবি : সংগৃহীত
পথচারী ও সাংবাদিকদের সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের অসদাচারণের কারণ ও তাদের পরিচয় জানতে চাওয়ায় রাজধানী ঢাকার মতিঝিলে পুলিশের হাতে শারীরিকভাবে ‘লাঞ্ছিত’ হয়েছেন দেশের গণমাধ্যমে কর্মরত ছয় সাংবাদিক। অভিযুক্ত পুলিশের সদস্যরা হচ্ছেন, মতিঝিল থানার এএসআই মোর্শেদ, কনস্টেবল নাইমুল ও হুমায়ূন।
অভিযোগ থেকে জানা গেছে, শুক্রবার রাত ১০টার দিকে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের সামনের ফুটপাতের খোলামেলা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তিরা বসে ও দাঁড়িয়ে কথা বলেছিলেন। এসময় নিজেদের মধ্যেও কথা বলছিলেন অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের নিজস্ব প্রতিবেদক শেখ আবু তালেব, আজকের পত্রিকার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জয়নাল আবেদীন খান, আমার সংবাদের নিজস্ব প্রতিবেদক রেদওয়ানুল হক, দেশ রূপান্তরের নিজস্ব প্রতিবেদক এ জেড ভূঁইয়া আনাস, অর্থসূচকের নিজস্ব প্রতিবেদক মো. সুলাইমান ও ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি পোস্টের নিজস্ব প্রতিবেদক আল ইহসান।
এ সময় পুলিশের মতিঝিল থানার এএসআই মোর্শেদের নেতৃত্বে সশস্ত্র অবস্থায় নাইমুল ও হুমায়ূন (পরে নাম জানা গেছে) নামের দুজন কনস্টেবল দূর থেকেই মারমুখী হয়ে সবাইকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিতে থাকেন। পুলিশের মারমুখী আচরণ দেখে ভয়ে আশপাশে বসে থাকা ব্যক্তিরা দ্রুত গতিতে সরে যেতে শুরু করেন।
তখন সাংবাদিকরা পুলিশ সদস্য হিসেবে এ ধরণের দম্ভিক ও অসদাচরণ করতে পারেন কি-না তা জানতে চাইলে আকস্মিকভাবে সাংবাদিক রেদওয়ানকে ধাক্কা দিয়ে দূরে ঠেলে দেন কনস্টেবল নাইমুল। তার বুকে থাকা ‘নেমপ্লেট’ ঢেকে রাখায় সাংবাদিক শেখ আবু তালেব এগিয়ে এসে ওই পুলিশের নাম ও পদবি জানতে চান। এসময় তাকেও সজোরে ধাক্কা দিয়ে পাশের নিচু জায়গায় ফেলে দেন সেই কনস্টেবল। এসময় তিনি হাঁটুতে আঘাত পান ও হাতের মোবাইল ছিটকে পড়ে যায়।
অন্যরা এগিয়ে আসলে তাদেরকেও হেনস্তা করা হয়, অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলেন পুলিশের আরেক সদস্য হুমায়ুন। পুলিশ দলটির নেতৃত্বদানকারি এ এস আই মোর্শেদ নীরব থাকায় দুই পুলিশ সদস্য আরো উত্তেজিত হয়ে পড়েন। হইচই শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করার চেষ্টা করলে ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা তাদের পথরোধ করে নিকটস্থ পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যায়।
সাংবাদিক আবু তালেব বলেন, ‘স্থানটি খোলামেলা ও বিদ্যুতের আলো থাকায় অনেক লোকজনই এখানে বসে বা দাঁড়িয়ে কথা বলেন, কিছুক্ষণ থাকেন। অন্যান্যদের মতো আমরাও নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলাম, আর এক জন আসবে বলায় তার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। হঠাৎ আসা পুলিশের এরকম আচরণে আমরা বিব্রত হয়ে পড়ি। তাদের উগ্র ও মারমুখী রূপ আতঙ্ক ছড়ালে বসে থাকা অন্যান্য লোকজন দ্রুত চলে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা বলতে থাকেন ৫ মিনিটের মধ্যে চলে যেতে হবে। আমি বলে দেই, আমরা এখনই চলে যাচ্ছি। এরপরও দুই কনস্টেবল নাইমূল ও হুমায়ুন উত্তেজিত ভাষায় হুমকি দিতে থাকেন। শান্ত হতে বলায় আরো ক্ষেপে যান। তাদের আচরণ দেখে মনে হচ্ছিল এখনই গুলিও করে দিতে পারে। পুলিশের আচরণ পেশাদার ছিল না। কোনো ধরনের পরিবেশও ছিলনা পুলিশের উত্তেজিত হওয়ার।’
আবু তালেব আরো বলেন, ‘সাংবাদিক রেদওয়ানকে ধাক্কা দেয়ায় আমি তার সামনে গিয়ে দেখি বুকের নেমপ্লেট ঢেকে রাখা। তারা কোন থানায় কর্মরত, নাম ও পরিচয় জানতে চাওয়ায় জোড়ে আমাকে ধাক্কা দিয়ে আমাকে ফেলে দেন কনস্টেবল নাইমূল। যার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না আমি।’
তিনি বলেন, ‘আচমকা ধাক্কায় পড়ে গিয়ে বাম পায়ের হাঁটুতে ব্যাথা পেয়েছি। অল্প কয়েকজন পুলিশ সদস্যদের কারণে পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। তাদের দ্রুত বরখাস্ত ও ঘটনার সুষ্টু তদন্ত স্বাপেক্ষে বিচার চাই।’
সাংবাদিক জয়নাল আবেদীন খান বলেন, ‘আমরা পরিচয় দিয়ে চলে যেতে চাইলেও তারা কর্কশ ভাষায় কথা বলেন। পুলিশের দুই কনস্টেবল উচ্চবাচ্য করলেও এএসআই মোর্শেদ নীরব থেকে তাদের সমর্থন দেন। এতে তারা আরও হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন উপস্থিত সবাইকে। আমরা প্রতিবাদ জানালে ঘটনাস্থলে অনেক পথচারী জড়ো হয়, এরপর পুলিশ সদস্যরা দ্রুত চলে যেতে শুরু করেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি তৎক্ষণাৎ বিষয়টি পুলিশের ডিসি (মতিঝিল)-কে জানাই। লিখিত অভিযোগ নিতে প্রথমে গড়িমসি করলেও পরে মতিঝিল থানা অভিযোগ নেয়। এ সময় থানায় কম্পিউটার পরিচালনা করার মতো কোনো পুলিশ সদস্য না থাকায় পুরনো পদ্ধতিতে কার্বন ব্যবহার করে লিখে জমা দিতে হয়েছে।
পুলিশের ক্ষমতার অপব্যবহার, সাধারণ পথচারীদের সঙ্গে অসদাচারণ ও এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করায় ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত তিন পুলিশ সদ্যসকে দ্রুত বরখাস্ত ও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করেছেন ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা। মতিঝিল থানায় এসব দাবি জানিয়ে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন তারা।