নির্বাচন আয়োজন বিষয়ে জানতে ৮ জুলাই ১৬ দিনের সফরে ঢাকায় পৌঁছে ইইউ অনুসন্ধানী দল। ফাইল ছবি
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থাসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছে সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল। আলোচনার অংশ হিসেবে রোববার (১৬ জুলাই) গুলশানের ইইউ দফতরে বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে কথা হয় প্রতিনিধি দলের।
এসব আলোচনায় নির্বাচনের সময় সহিংসতা, বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা, বিচার ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্নের জবাব খুঁজেছেন তারা।
সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবিরের সঙ্গে বৈঠক করেন ইইউ প্রতিনিধিরা।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ড. মাহফুজ কবীর বলেন, ‘তারা বর্তমান নির্বাচনী পরিবেশ সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আমি বলেছি, এখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ ও সহিংসতামুক্ত।’
নির্বাচনের আগে ইইউর আরও একটি পর্যবেক্ষক দল পাঠাতে তাদের পরামর্শ দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর বিষয়ে জানতে চেয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ছোট একটি দল পাঠাতে পারে বলে জানিয়েছি।
এছাড়া ইইউ প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচন প্রক্রিয়া সহজ ও সঠিক করার কথা বলেছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
তিনি বলেন, ‘দেশের অবস্থা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহায়ক কি না তারা জানতে চেয়েছেন। তবে নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আমি কোনো প্রস্তাব দেইনি। বলেছি, মানুষের বিকল্প বেছে নেয়ার স্বাধীনতা যেন থাকে, পুরো প্রক্রিয়াটা যেন স্বচ্ছ হয়, কোনো রকম কারসাজি যেন না হয় তা নিশ্চিতের বিষয়ে বলেছি।’
এছাড়া বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঙ্গেও বৈঠক করেন নির্বাচন অনুসন্ধানী মিশনের প্রতিনিধিরা।
তবে এ বিষয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি ফাহমিদা খাতুন।
এ বিষয়ে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, দেশীয় পর্যবেক্ষকদের অভিজ্ঞতা তারা জানতে চেয়েছেন। আমি বলেছি, গত ৫টি সিটি নির্বাচন ও বাই ইলেকশন সুষ্ঠু করার অভিজ্ঞতা আছে নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন সুষ্ঠু করার সক্ষমতা ইসির রয়েছে বলেও জানিয়েছি।
অন্যদিকে সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন।
এ সময় তিনি শেষ দুই নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন।
বৈঠকশেষে বের হয়ে তিনি বলেন, ‘শুধু সরকারি দল ছাড়া প্রত্যেকেই সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিলে বোঝা যাবে দেশের প্রকৃত চিত্র।’
এছাড়া খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা রাজনৈতিকভাবে হয়রানির উদ্দেশ্যে দেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে নির্বাচন কেমন হতে যাচ্ছে সে বিষয়ে ইইউ প্রতিনিধি দলের সংশয় আছে বলে বৈঠক শেষে জানিয়েছেন ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ।
তিনি বলেন, ‘তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন কি না তা এখনই নিশ্চিত করে বলেননি। এছাড়া নির্বাচনের জন্য যে প্রস্তুতি ও আস্থার দরকার ছিল সেটা নেই এবং আরপিও পরিবর্তনকে তারা ভালো চোখে দেখছে না।’
এছাড়া বিচার বিভাগ কতটা স্বাধীনভাবে নির্বাচনকালে দায়িত্ব পালন করতে পারবে সে বিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের কাছে জানতে চেয়েছেন ইইউ প্রতিনিধিরা।
গত ৮ জুলাই ১৬ দিনের সফরে ঢাকায় পৌঁছায় ইইউ অনুসন্ধানী দল। আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত সফরের শিডিউল করা এ প্রতিনিধিদলে আছেন দিমিত্র ইওয়ানু, আলভেস ক্রিটিনা ডস রামোস, মিলার ইয়ান জেমস, শ্যামেন ক্রিস্টোফার ও ম্যারি-হেলেন এন্ডারলিন প্রমুখ।