কাবার গিলাফ তৈরি। ছবি: সংগৃহীত
মক্কা ইসলাম ধর্মের পবিত্রতম নগরী। মুসলিমরা প্রতি বছর হজ্জ্ব ও উমরাহ পালনের জন্য মক্কায় আসেন। মক্কার প্রাণকেন্দ্রে কাবা অবস্থিত। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী কাবা হলো পৃথিবীর প্রথম মসজিদ।
আরবি নান্দনিক ক্যালিগ্রাফিতে খচিত কালো গিলাফে ঢাকা পবিত্র এ কাবা। কাবার এ কালো গিলাফকে কিসওয়া বলা হয়। যা কাবা শরিফকে অপার্থিব গভীর ভালবাসায় জড়িয়ে রেখেছে। যা প্রতিবছর পবিত্র হজের পর মহররম মাসে পরিবর্তন করা হয়।
বিশেষভাবে তৈরি এই গিলাফে প্রতি মিটারে দশ ধাপে লাগানো হয় ৯৯০০ সুতা। সৌদি আরবের উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. নাসের বিন আলি আল-হারেসির তথ্য থেকে জানা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়ে পবিত্র কাবা শরিফে গিলাফ ব্যবহৃত হতো না।
কাবাঘরে গিলাফ ব্যবহারের সঠিক তারিখ জানা না গেলেও পবিত্র নগরী মক্কা ও তায়েফে প্রাপ্ত শিলালিপিতে খচিত আরবি ক্যালিগ্রাফি সূত্রে জানা যায়, ৪০ হিজরি সনের দিকে আরবি ক্যালিগ্রাফির উন্নত স্টাইল তখন অধিক প্রচলিত ছিল। বর্তমান সময়ে একই স্টাইলের আদলেই পবিত্র কাবা শরিফের গিলাফে সোনার সুতায় আরবি ক্যালিগ্রাফি খচিত হচ্ছে।
১৩৪৬ হিজরিতে কাবা শরিফের গিলাফ তৈরিতে বিশেষ কারখানা তৈরির বিষয়টি সামনে আসে এবং তৎকালীন সৌদি বাদশাহ আবদুল আজিজ আল-সৌদের নির্দেশক্রমে গিলাফ বা কিসওয়া তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৩৪৬ সালে ওই কারখানায় নির্মিত অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর ক্যালিগ্রাফিতে সজ্জিত কালো গিলাফ দ্বারা আবৃত করা হয় পবিত্র কাবা শরিফ।
কাবা শরিফের গিলাফের বাইরের কালো কাপড়ে স্বর্ণমণ্ডিত রেশম সুতা দিয়ে দক্ষ কারিগর দিয়ে ক্যালিগ্রাফি করা হয়। এরপর ঝারনিখ কালি দিয়ে প্রথমে কাপড়ে ক্যালিগ্রাফির আউটলাইন দেয়া হয়, তারপর কারিগররা হরফের ভেতর রেশম সুতার মোটা লাইন বসিয়ে স্বর্ণের সুতা দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে হরফ ফুটিয়ে তোলেন।
কাবা শরিফের গিলাফ নির্মাণে যেসব জিনিসপত্র প্রয়োজন সেগুলো তৈরির বিশেষ কারখানা মক্কার উম্মুল জুদ এলাকায় অবস্থিত। নতুন গিলাফ তৈরি করতে দরকার হয় ১২০ কেজি সোনার সুতা, ৭০০ কেজি রেশম সুতা ও ২৫ কেজি রুপার সুতা। গিলাফটির দৈর্ঘ্য ১৪ মিটার এবং প্রস্থ ৪৪ মিটার।
গিলাফের সেলাই কাজে অংশগ্রহণ করেন দেড় শতাধিক অভিজ্ঞ দর্জি। গিলাফ তৈরিতে ব্যবহার করা হয় বিশেষ মেশিন। কালো সিল্কের কাপড়ের ওপর পবিত্র কোরআনের আয়াত উৎকীর্ণ করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় সোনা ও রুপার তৈরি সুতা। কাবা শরিফের গিলাফ তৈরির পর তা বিশেষ বৈদ্যুতিক প্রক্রিয়ায় তাপ দেয়া হয়। যাতে তা প্রচণ্ড রোদ ও তাপেও অবিকৃত থাকে।