চাঁদের পথে ভারতের চন্দ্রযান-৩। ছবি: সংগৃহীত
সফলভাবে পৃথিবীর কক্ষপথ ত্যাগ করেছে ভারতের তৃতীয় চন্দ্র অভিযান চন্দ্রযান-৩। পৃথিবীর কক্ষপথ ত্যাগ করে এখন সরাসরি চাঁদের পথে এগিয়ে যাচ্ছে ইসরোর তৈরি এই মহাকাশযান। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহাকাশযানটি এই মুহূর্তে চাঁদ থেকে আর মাত্র ৬ দিনের দূরত্বে রয়েছে।
গত ১৪ জুলাই অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে চাঁদের উদ্দেশে উৎক্ষেপণ করা করা হয় চন্দ্রযান-৩। যার হাত ধরে চন্দ্রপৃষ্ঠে ‘সফ্ট ল্যান্ডিং’ তথা নিরাপদ অবতরণের আশা করছে ভারতের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ইসরো।
চন্দ্রযান-৩ ঘিরে যেসব চ্যালেঞ্জগুলো ছিল, তার মধ্যে অন্যতম হলো পৃথিবীর কক্ষপথ পেরিয়ে যাওয়ার ধাপটি। এক্ষেত্রে চন্দ্রযান-৩-এর গতি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করার জন্য মোট পাঁচটি কক্ষপথ পরিবর্তনের পরিকল্পনা করে ইসরো।
সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পুরোপুরি সফল হয় ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। একে একে সবগুলো কক্ষপথ পেরোনোর চেষ্টা সম্পন্ন করেছে চন্দ্রযান-৩। যে পাঁচটি পৃথক ধাপ পার করার কৌশল নিয়ে চন্দ্রযান-৩ এগিয়েছে তার প্রথমটি সফল হয় ১৫ জুলাই।
এর পরেরটি ১৬ জুলাই। তার পরেরটি ১৮ জুলাই। এরপর ২০ জুলাই পার করে চতুর্থ ধাপ। সবশেষ গত মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) চূড়ান্ত ও পঞ্চম ধাপ পার করে এটি।
এরপর মঙ্গলবার (১ আগস্ট) এক টুইট বার্তায় ইসরো জানায়, পৃথিবীর কক্ষপথগুলোতে প্রদক্ষিণ সম্পন্ন করেছে চন্দ্রযান-৩। এবার যানটিকে পাঠিয়ে দেয়া হলো চাঁদের দিকে। ইসরো আরও জানায়, সফল পেরিজি ফায়ারিংয়ের মাধ্যমে মহাকাশযানটিকে ট্রান্সলুনার অরবিট তথা চাঁদের কক্ষপথে ঠেলে দেয়া হয়।
ইসরোর এলভিএম৩-এম৪/চন্দ্রযান-৩ মিশন টুইটার হ্যান্ডেল থেকে জানানো হয়েছে, এখন পর্যন্ত ঠিকভাবেই কাজ করছে চন্দ্রযান-৩। আগামী ৫ আগস্ট এটি চাঁদে পৌঁছবে বলে মনে করা হচ্ছে। আর চাঁদের মাটিতে চন্দ্রযানের ‘সফ্টল্যান্ড’ তথা অবতরণ হবে আগামী ২৩ আগস্টে।
ট্রান্সলুনার অরবিটে ঠেলে দেয়ার আগে চন্দ্রযান-৩ ও তার প্রোপালশান মডিউলটি ১ লক্ষ ২৭ হাজার ৬০৩ কিলোমিটার X ২৩৬ কিলোমিটার দূরত্বে ছিল। তবে মোটেও এক ধাক্কায় পৃথিবী থেকে এত দূরের কক্ষপথে স্থাপন করা হয়নি চন্দ্রযান-৩-কে।
এজন্য নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করেন বিজ্ঞানীরা। গত ১৫ দিন ধরে পৃথিবীর চারপাশে প্রদক্ষিণের সময় ধাপে ধাপে দূরত্ব বাড়ায় চন্দ্রযান-৩ ও তার প্রোপালশান মউিউল। পাঁচটি ধাপ পেরোনোর পর তারা ১ লক্ষ ২৭ হাজার ৬০৩ কিলোমিটার ২৩৬ X কিলোমিটার দূরত্বে এসে পৌঁছায়। এরপর প্রয়োজন ছিল একটি বড়সড় ‘ইনজেকশন’ বা ধাক্কার।
মঙ্গলবার (১ আগস্ট) ট্রান্সলুনার ইনজেকশন সফল হয়। সেই ধাক্কাতেই পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে ছিটকে বেরিয়ে চাঁদের কক্ষপথের দিকে এগিয়ে যায় চন্দ্রযান-৩। এরপর একইভাবে ধাপে ধাপে চাঁদের চারপাশে কয়েকবার পাক খাবে এই মহাকাশযান। প্রতি ধাপেই চন্দ্রযান-৩-এর থেকে কমবে চন্দ্রপৃষ্ঠের দূরত্ব। তারপর আগামী ২৩ বা ২৪ আগস্ট নাগাদ চাঁদের দক্ষিণ গোলার্ধে অবতরণ করবে সে।
ইসরোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, উৎক্ষেপণের প্রায় ৪০ দিন পর চাঁদের মাটিতে নামতে পারে চন্দ্রযান-৩-এর সৌরচালিত ল্যান্ডার ‘বিক্রম’। সফল হলে সেখান থেকে সৌরচালিত রোভার ‘প্রজ্ঞান’ বেরিয়ে চাঁদের মাটি ছোঁবে।
এরপর চাঁদের মাটির চরিত্র ও বিভিন্ন খনিজ পদার্থের উপস্থিতি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করবে। পাশাপাশি যে অঞ্চল দিয়ে ‘প্রজ্ঞান’ চলাচল করবে সেখানকার চাঁদের জমিতে অশোকস্তম্ভ ও ইসরোর প্রতীক আঁকা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে, টাইমস অব ইন্ডিয়া।