বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জুবাইদা রহমানের কারাদণ্ডের রায়ের পর সচিবালয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। ছবি একুশে বিডি।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জুবাইদাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকরের চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
বুধবার (২ আগস্ট) বিকেলে রায় ঘোষণার পর সচিবালয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ কথা জানান তিনি।
আসামিকে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করার বিষয়ে সরকারের কোনো উদ্যোগ থাকবে কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘সবসময় থাকবে, সেটা আমাদের দায়িত্ব। সরকার তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অবশ্যই করবে।’
বিএনপি বলছে, এটি ফরমায়েশি রায়। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। সে সময় ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাথে তাদেরই নিয়োগপ্রাপ্ত সেনাপ্রধানের যথেষ্ট সখ্য ছিল, সেটা সম্বন্ধে আমার কিছু বলার নেই, আপনারাই জানেন। তারাই এই দুর্নীতি মামলা দায়ের করেছে।’
তারপরে হাইকোর্টে এই দুর্নীতি মামলা দায়েরের পরে যিনি আসামি তার পক্ষে যাওয়া হয়েছে। হাইকোর্ট যখন সেটা নাকচ করে দিলেন, এরপর আপিল বিভাগে গেছেন ওনারা। আপিল বিভাগ নাকচ করার পরে এই দায়িত্ব বর্তায় বিচারিক আদালতে। এখানে তারা যদি বলেন ফরমায়েশি তাহলে আইন সম্বন্ধে তাদের সম্মুখ ধারণা আছে কিনা আমার সন্দেহ।
বিএনপি বলছে নির্বাচনের আগে এই ধরনের একটি রায় দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে বিভ্রান্ত করার কী আছে? বিচারিক কাজ হয়েছে এরপর রায় বেরিয়েছে। আর এই আসামি তো আগে থেকেই সাজাপ্রাপ্ত। তিনি একুশে অগাস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার যাবজ্জীবন পেয়েছেন। আরেকটা দুর্নীতির মামলায় হাইকোর্ট তাকে সাত বছরের দণ্ডাদেশ দিয়েছেন। নতুন করে উনাকে এটা দিয়ে উনার ভাবমূর্তির খারাপ করার তো আমাদের প্রচেষ্টার তো প্রয়োজন পড়ে না।’
বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে তারেক রহমান অথবা বিএনপিপন্থীদের একটা বক্তব্য ছিল যে এটা তড়িৎ গতিতে করা হয়েছে। এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,
একদিকে বলা হয় এখানে বিচার হয় না, সবকিছু অত্যন্ত স্লো গতিতে চলে আরেকদিকে বলা হয় বিচারটা তাড়াতাড়ি হয়ে গেছে। প্রথম কথা হচ্ছে তর্কটা যৌক্তিক হওয়া ভালো। এখানে অযৌক্তিক তর্ক করে শুধু একটা দোষী বা নির্দোষ যেটাই বলেন আদালতের ব্যাপার, আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। দোষ যখন করেছে তখন এগুলো দিয়ে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করাটা না করাই উচিত।
বিএনপি বলছে তাদের রাজনৈতিক মাঠ থেকে সরিয়ে দেয়ার প্রয়াস এগুলো। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারাই দেখছেন যে বিএনপি যতক্ষণ রাজনীতি করছে তাদের কেউ বাধাগ্রস্ত করছে না। আইনের শাসনের জন্য তাদের অপরাধের বিচার করাটা আমার মনে হয় না তাদের রাজনীতি থেকে বিতাড়িত করার পরিকল্পনা।’
এর কিছুক্ষণ আগে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ৯ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং তার স্ত্রী জোবায়দা রহমানকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া তারেককে ৩ কোটি টাকা ও জুবাইদাকে ৩৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে।
গত ২৪ জুলাই এ মামলায় আদালতে সবশেষ সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন দুদকের উপপরিচালক তৌফিকুল ইসলাম। তার সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। এরপর গত ২৭ জুলাই আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন হয়। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের জন্য বুধবার দিন ধার্য করেন।
গত ২১ মে মামলার বাদী দুদকের উপপরিচালক জহিরুল হুদার সাক্ষ্যের মাধ্যমে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মামলাটিতে চার্জশিটভুক্ত ৫৬ সাক্ষীর মধ্যে ৪৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত।
গত ১৩ এপ্রিল একই আদালত তারেক ও জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন। এ মামলায় তাদের পলাতক দেখানো হয়।
জ্ঞাত আয়ের বাইরে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক হওয়া এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন।
মামলার বাকি দুই আসামি তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও তার মা ইকবাল মান্দ বানু। ২০০৮ সালে তিন আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়।
এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জুবাইদা রহমানকে আদালতে হাজির হতে বাংলাদেশ সরকারি মুদ্রণালয় থেকে গেজেট প্রকাশ করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান।
গেজেটে বলা হয়, তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। আদালতের বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে যে, তারা গ্রেফতার ও বিচার এড়ানোর জন্য আত্মগোপনে রয়েছেন। সেহেতু তাদের আগামী ধার্য তারিখের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অন্যথায় তাদের অনুপস্থিতিতে বিচারকার্য সম্পাদন করা হবে।
গত বছরের ১ নভেম্বর একই আদালত তারেক ও জুবাইদার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। বর্তমানে তারা পলাতক। তারেক রহমানের শাশুড়ি মারা যাওয়ায় তাকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।