স্পেনের বুঁয়্যোল শহরে মহাসমারোহে উদযাপিত হয় টমেটো উৎসব। উৎসবে অংশগ্রহণকারীরা একজন অন্যজনের দিকে আনন্দ করে টমেটো নিক্ষেপ করেন। টমেটোপ্রেমী স্প্যানিশদের অন্যতম প্রাণের উৎসব ‘লা টমাটিনা’।
প্রতি বছর আগস্ট মাসের শেষ বুধবার স্পেনের বুঁয়্যোল শহরে উদযাপিত হয়। দুই ঘণ্টার উৎসবে জড়ো হন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার মানুষ। উৎসব শুরুর কয়েক মিনিটের মাঝেই অংশগ্রহণকারীরা আপাদমস্তক লাল রং ধারণ করেন।
বুঁয়্যোলের রাস্তায় শুরু হয় টমেটো সসের বন্যা। শহরটি ছোট ও মানুষদের জায়গা সংকুলন সম্ভব না হওয়ায় এতে যোগ দিতে ৪ মাস আগে থেকে আবেদন করতে হয়। ২০১১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বলিউডের সিনেমা ‘জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা’র মাধ্যমে প্রথম ‘লা টমাটিনা’ বা টমেটো উৎসবটির দেখা মিলে।
দীর্ঘ ষাট বছর ধরে অনুষ্ঠিত হওয়া টমাটিনা ফেস্টিভ্যালের ইতিহাস বলছে, ১৯৪৪ সালের দিকে ভ্যালেন্সিয়ার গ্রামটিতে শুরু হয়েছিল ‘লা টমাটিনা উৎসব’। স্থানীয়দের মতে, একসময় এই শহরে মানুষের তেমন আসা-যাওয়া ছিল না। লোকসংখ্যাও ছিল কম।
অঞ্চলটিতে প্রচুর পরিমাণে টমেটো উৎপাদন হলেও উপযুক্ত ব্যবহারের অভাবে তা নষ্ট হয়ে যেত। ফলে কিছু লোক পরিকল্পনা করে শহরের সম্মানীয় ব্যক্তিত্ব সেইন্ট লুইস বার্ট্রান্ট এবং মা মেরিকে উৎসর্গ করে টমেটো ছোড়া উৎসবের সূচনা করেন। কালের বিবর্তনে তা রূপ নেয় মহোৎসবে।
অধিকাংশ অংশগ্রহণকারীরা টমেটো ছুড়তে নামেন খালি গায়ে। প্রায় ১০০ টনের মতো টমেটোর রস ছিটিয়ে সবাই মেতে উঠে আনন্দ উৎসবে । তবে নিরাপত্তার জন্য কেউ কেউ চোখে গগলস এবং হাতে গ্লাভস পরে নেন।
এভাবে তুমুল আনন্দ আর উত্তেজনার মধ্য দিয়ে টমেটো যুদ্ধ চলে ঘণ্টাব্যাপী। যে কেউ যে কারো গায়ে টমেটো ছুড়ে মারতে পারে। উৎসবের পর টমেটোগুলো পরিষ্কারের কাজটাও উৎসবে অংশগ্রহণকারীরাই স্বাচ্ছন্দ্যে করে থাকেন।
তখনও শুরু হয় আরেক উৎসব। গ্যালন গ্যালন পানি ঢেলে রাস্তা পরিষ্কার করে নিজেরা ঝাঁপিয়ে পড়েন নদীতে। মূল উৎসব শুরুর এক সপ্তাহ আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়। উৎসব উপলক্ষে বুঁয়্যোল শহরের নানা স্থানে বসে গানের আসর। নাচানাচি, আতশবাজিও চলে সপ্তাহজুড়ে। টমেটো যুদ্ধের পর রাতে বসে রান্নাবান্নার প্রতিযোগিতা।
প্রতি বছর প্রায় পঞ্চাশ হাজার পর্যটকের আগমন ঘটে উৎসবটি দেখতে। শুধু স্পেনেই নয়, চিলির কুইলন শহরেও টমেটো যুদ্ধ উৎসবের আয়োজন করা হয়। স্পেনের ‘লা টমাটিনা উৎসব থেকে অনুপ্রাণীত হয়ে চিলিতেও দারুণ সমারোহে এ উৎসব উদযাপন করা হয়। টমেটো ছুড়ে দেওয়ার এ যুদ্ধে অংশ নেয় কমপক্ষে সাত হাজার মানুষ। যুদ্ধে ব্যবহার করা হয় ৪০ টনেরও বেশি টমেটো।