মোহাম্মদ রফিক। ফাইল ছবি
খ্যাতনামা কবি, লেখক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার (৭ আগস্ট) এক শোক বার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও একুশে পদকপ্রাপ্ত এ মননশীল আধুনিক কবি বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদানের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে।
আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে কাব্যিক রসদ যোগানো কবি মোহাম্মদ রফিক (৮০) বছর বয়সে রোববার (৬ আগস্ট) উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল থেকে ঢাকায় আনার পথে মারা যান।
গতকালই কবি মোহাম্মদ রফিকের চাচাতো ভাই মো. শিবলী মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে, বাগেরহাটের চিতলীতে নিজ বাড়িতে সকালে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে কবিকে প্রথমে বাগেরহাট এবং পরে বরিশাল নেয়া হয়। বরিশালে অবস্থা গুরুতর হলে চিকিৎসকরা তাকে ঢাকায় নেয়ার পরামর্শ দেন। সন্ধ্যায় পরিবারের সদস্যরা ঢাকা নিয়ে আসার পথেই মারা যান তিনি।
কবি মোহাম্মদ রফিক ষাটের দশকে ছাত্র আন্দোলন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে কবিতা ও কবিতার ভাষার মাধ্যমে অসামান্য অবদান রাখেন।
মোহাম্মদ রফিক একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও জেমকন সাহিত্য পুরস্কারসহ বিভিন্ন স্বীকৃতি ও সম্মাননায় ভূষিত হন। তার ‘কপিলা’, ‘খোলা কবিতা, ‘গাওদিয়া’, ‘মানব পদাবলী’, ‘আত্মরক্ষার প্রতিবেদন’ ইত্যাদি কবির উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।
১৯৪৩ সালের ২৩ অক্টোবর বাগেরহাট জেলার বেমরতা ইউনিয়নের চিতলী-বৈটপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কবি মোহাম্মদ রফিক। তার বাবার নাম সামছুদ্দীন আহমদ এবং মাতার নাম রেশাতুন নাহার। এ দম্পতির আট সন্তানের মধ্যে মোহাম্মদ রফিক সবার বড়। মোহাম্মদ রফিকের শৈশব কাটে বাগেরহাটে। মেট্রিক পাস করে তিনি ঢাকার নটরডেম কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন। তবে পরে ঢাকা কলেজে মানবিক বিভাগে চলে যান।
১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে এম এ ডিগ্রি লাভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি পাকিস্তানের সামরিক শাসনবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হন। পাকিস্তানের সামরিক আদালত তাকে দশ বছরের কারাদণ্ড দেয়। কিন্তু এম এ পরীক্ষার জন্য তিনি ছাড়া পান। ১৯৭১ সালে তিনি প্রথমে মুক্তিযুদ্ধের ১ নং সেক্টরের কর্মকর্তা হিসেবে এবং পরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কাজ করেন।
মুক্তিযুদ্ধের পর বিভিন্ন কলেজে শিক্ষকতা করার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে যোগ দেন কবি। ২০০৯ পর্যন্ত তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। ২০০৯ সালে অবসরের পর ঢাকায় থাকতেন। গত সপ্তাহে কবি তার ছোট ছেলে শুদ্ধসত্ব রফিকের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যান।
মোহাম্মদ রফিক একাধারে কবি, লেখক ও শিক্ষক ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি দুই ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।