ইলিশ ধরে পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে রেখেছে জেলেরা। ছবি
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে বেড়েছে ইলিশ অবতরণ। ২০২২-২৩ অর্থ বছরের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর পরবর্তী ১৩ দিনে অবতরণ বেড়েছে ৫.৪৬ শতাংশ। বৃদ্ধি পেয়েছে ইলিশের আকৃতিও।
মৎস্য বিভাগ বলছে, জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের কারণে সাগরে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় অবতরণ বেড়েছে। ফলে বেড়েছে রাজস্ব আদায়।
পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে সূত্র জানায়, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার পরবর্তী ২০২২-২৩ অর্থ বছর ২৪ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ইলিশ অবতরণ হয়েছে ১২৩.৫৩ মেট্রিক টন। যার বাজারমূল্য ছিল ৮ কোটি ৪০ লাখ ৫২ হাজার ৮ শ’ টাকা। যা চলতি অর্থ বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩০.২৭ মেট্রিক টনে। যার বাজারমূল্য ছিল ১১ কোটি ৮২ লাখ ৯৬ হাজার ৪ শ’ টাকা। গত অর্থ বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে নিষেধাজ্ঞা পরবর্তী ১৩ দিনে ইলিশ বেড়েছে ৫.৪৬ শতাংশ।
তবে কমেছে মিশ্রিত মাছের অবতরণ। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার পরবর্তী গত অর্থ বছরের ২৪ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত মিশ্রিত মাছ অবতরণ হয়েছিল ৭৩.২৮ মেট্রিক টন। যার বাজারমূল্য ছিল ৩ কোটি ৩৬ লাখ ৬ হাজার ৪ শ’ টাকা। তবে চলতি অর্থবছরের একই সময়ে মিশ্রিত মাছের পরিমাণ ৮.৫৩ শতাংশ কমেছে। এবছর মিশ্রিত মাছ অবতরণ হয়েছে ৬৭.১১ মেট্রিক টন। যার বাজারমূল্য ছিল ১০ কোটি ৯৮ লাখ ৪ হাজার ৮ শ’ টাকা।
গত বছর ২৪ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ১৩ দিনে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ১২ লাখ ৩৩ হাজার ৮৬০ টাকা। চলতি বছরের যা ৩৩.৪৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৪৬ হাজার ৪৮০ টাকায়।
পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণকেন্দ্রের তথ্য মতে, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর পরবর্তী ১৫ দিনে গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থ বছরে ইলিশের অবতরণ বেড়েছে ৫.৪৬ শতাংশ। বৃদ্ধি পেয়েছে ইলিশের আকৃতিও। পদ্মাসেতুর কারণে মাছ পরিবহন সহজ হওয়ায় বেড়েছে মাছের দাম। যার সুফল পাচ্ছেন জেলেরা। বেড়েছে রাজস্ব আদায়ও।
এ বিষয়ে জেলে বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এবছর আমরা মাছ ভালো পাচ্ছি। সাগরে জাল ফেললেই ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। এটা আমাদের জন্য সৌভাগ্যের বিষয়। একের পর নিষেধাজ্ঞা এবং বৈরি আবহাওয়ায় কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। এখন মাছ পাওয়া আমরা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবো।’
আর এক জেলে বলেন, ‘আগের তুলনায় সাগরে মাছ শিকারের ব্যয় বেড়েছে। এখন সাগরে মাছ পাওয়ার আমরা লাভবান হচ্ছি। সমুদ্রে গিয়ে এক একবার জাল ফেললেই ১৫০ থেকে ২০০টি করে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। সাগরে গিয়ে ১০ থেকে ১২ দিন মাছ শিকার করলে অনেক মাছ পাওয়া যায়।’
এ বিষয়ে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণকেন্দ্রের বিপণন কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘এবছর যে শুধু ইলিশ বেড়েছে, এমনটা নয়। ইলিশের আকৃতিও বেড়েছে গত কয়েক বছরের তুলনায়। এটা আমাদের জন্য অনেক স্বস্তির খবর। এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে দেশে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে আরও কয়েকগুণ। এতে বাড়বে রাজস্ব আদায়।’
এ বিষয়ে পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক লে. মো. মাসুদ সিকদার বলেন, ‘গত কয়েক বছরের তুলনায় এবছর ইলিশ বেশি। সেই সাথে দামও বেশি। পদ্মা সেতুর করাণে মাছ পরিবহন সহজ হওয়ায় এ অবতরণকেন্দ্রে বেড়েছে মাছের দাম। যার ফলে অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি লাভবান হচ্ছেন জেলেরা।’
এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব বলেন, ‘মাছ শিকারে নিষিদ্ধকালীন বাস্তবায়নের পাশাপাশি জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দেয়ার নির্বিঘ্নে বড় হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে ইলিশ। তাই ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে আকৃতি। আমরা চেষ্টা করছি জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়ার। এতে মাছ শিকারের ওপর চাপ কমবে। ফলে মাছের উৎপাদন এবং আকৃতি আরও বৃদ্ধি পাবে।’