মিছিলের সামনে যাওয়ায় কর্মীকে (ডানে লাল বৃত্তচিহ্নিত) থাপ্পড় মারেন সাবেক সাংসদ মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন (বাঁয়ে লাল বৃত্তচিহ্নিত)। ছবি: ভিডিও থেকে নেয়া
মিছিলের মধ্যে প্রকাশ্যে এক কর্মীকে থাপ্পড় দিয়ে সমালোচিত হচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন।
গত ১৮ অক্টোবর (বুধবার) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় সমাবেশে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে যাওয়া জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীদের মিছিলে এই ঘটনা ঘটে।
এরইমধ্যে ঘটনার একটি ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, মিছিলের সামনে থাকা নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন হঠাৎ তেড়ে একটু পেছনে গিয়ে সাদা সালাহউদ্দিন নামে একজন কর্মীর গালে থাপ্পড় দেন এবং বুকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেন।
এ সময় গিয়াসউদ্দিন আরও একজন বয়স্ক লোককে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন এবং নেতা-কর্মীদের সঙ্গে চিৎকার–চেঁচামেচি করেন। এক পর্যায়ে নেতা–কর্মীদের দুই হাতের বুড়ো আঙুল উঁচিয়ে দেখান তিনি।
সালাউদ্দিন সিদ্ধিরগঞ্জের ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য বলে জানা গেছে। এ ঘটনা দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনা জন্ম দিয়েছে।
বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা বলছেন, জেলা বিএনপির সভাপতি ও একজন সাবেক সংসদ সদস্যের কাছ থেকে এমন আচরণ কখনোই কাম্য নয়। শৃঙ্খলা ফেরাতে তিনি নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ ধমক দেয়ার অধিকার রাখেন। কিন্তু কারো গায়ে হাত তোলা রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত।
জেলা বিএনপির মিছিলে গিয়াসের এমন আচরণে হতবাক হয়েছেন মিছিলে উপস্থিত অন্যান্য নেতাকর্মীরাও।
উপস্থিত নেতাকর্মীদের সূত্রে জানা যায়, ১৮ অক্টোবর ঢাকার নয়াপল্টনে অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা ঢাকার মতিঝিলের নটরডেম কলেজের সামনে জড়ো হন। নির্ধারিত সময়ে মিছিলটি শুরু হয়ে মহাসমাবেশের দিকে অগ্রসর হলে কিছু সংখ্যক নেতাকর্মী মিছিলের সামনে চলে আসেন এবং কয়েকজন ব্যানারের সামনে ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এ সময় তাদেরকে বারবার ব্যানারের পেছনে যেতে বলার পরও তারা গ্রাহ্য না করায় জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন মিছিল থেকে বেরিয়ে সামনে গিয়ে এই ঘটনা ঘটান।
এ সময় তার পাশে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজিবসহ অন্য নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর মিছিলটি পুনরায় অগ্রসর হয়ে মহাসমাবেশে উপস্থিত হয়। এই বিতর্কিত ঘটনায় জেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াস উদ্দিনের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক ইমেজ নষ্ট হয়েছে বলে মনে করছেন বিভিন্ন রাজনীতিকরা। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ ঘটনার গিয়াসের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন তারা।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ গণমাধ্যম কে বলেন, এটা অনাকাঙ্ক্ষিত একটা ঘটনা। আমিও সেদিন সমাবেশে গিয়েছিলাম। তবে ওই মিছিলে ছিলাম না। আমার ধারণা, হয়তো তিনি শাসনের মতো করতে চেয়েছিলেন। কাছের এবং অনুগত লোকদের এমনভাবে শাসন করার অধিকার থাকে। তবে এমন শাসন ইনডোরে হতে পারে। প্রকাশ্যে হওয়া উচিত নয়। এ ঘটনায় দলীয় কর্মসূচীগুলোতে কর্মীদের উৎসাহ কমে যাবে বলে মনে করেন জেলা বিএনপির এই সাবেক নেতা।
প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমার নজিরে এসেছে। একজন কর্মীর গায়ে শারীরিকভাবে আঘাত করা নেতার শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না।
তিনি বলেন, একজন সিনিয়র নেতার কাছ থেকে এমন আদর্শহীন আচরণ কেউ আশা করে না। কোনো রাজনৈতিক দলের নেতার এমন আচরণে নেতৃত্বের উপর কর্মীদের ঘৃণা জন্মায়। এতে দলের উপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কর্মীদের সাথে নেতাদের বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক থাকতে হয় বলেও মনে করেন জেলা সিপিবি’র এই নেতা।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই বলেন, বিষয়টি আমি জানি না। কী কারণে কোন প্রেক্ষাপটে তিনি এ কাজ কাজ করেছেন সেটা জানতে ও বুঝতে হবে। তবে প্রকাশ্যে কর্মীদের সাথে এমন আচরণ করা ঠিক না। সেটা যে দলেরই হোক। নেতাদের ধৈর্যশীল ও সংযত হতে হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের যোগাযোগের জন্য মুঠোফোনে কয়েকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে এর আগে একটি সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেনে, ‘মিছিল বের করার সময় অতি উৎসাহী কিছু কর্মী সিনিয়র নেতাদের পেছনে ফেলে সামনে গিয়ে সেলফি তুলছিল এবং বেয়াদবি করছিল। এতে সাংবাদিকদের ছবি তুলতে সমস্যা হচ্ছিল। ধমক দিয়ে বারণ করার চেষ্টা করলেও তারা শোনেনি। এরপর আমি আমার লোককে থাপ্পড় দিয়েছি।
কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ওই ঘটনা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।