ফের বিমানে ব্যবহৃত তেলের দাম বেড়েছে। অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের ক্ষেত্রে ৭৩ টাকা থেকে ৭ টাকা বাড়িয়ে প্রতি লিটার তেলের দাম ৮০ টাকা করেছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) আওতাধীন পদ্মা অয়েল কোম্পানি।
এ নিয়ে গত ১৬ মাসে বাংলাদেশে জেট তেলের দাম বাড়ল ১২ দফা। বুধবার (৯ ফেব্রুয়ারি) থেকে নতুন এ দাম কার্যকর শুরু হয়েছে। পদ্মা অয়েল জানায়, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার জন্য প্রতি লিটার তেল কিনতে হবে দশমিক ৭৫ মার্কিন ডলারে। আগে যেখানে দাম ছিল দশমিক ৬৭ মার্কিন ডলার।
এর আগে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনার জন্য প্রতি লিটারের দাম নির্ধারিত ছিল ৪৮ টাকা। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে দাম বাড়িয়ে করা হয় ৫৩ টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ৫৫ টাকা, মার্চে ৬০ টাকা ও এপ্রিলে ৬১ টাকা।
তবে মে মাসে লিটারে ১ টাকা দাম কমানো হয়েছিল। জুনে প্রতি লিটারে ৩ টাকা বাড়িয়ে করা হয় ৬৩ টাকা। জুলাইয়ে ৬৬, আগস্টে ৬৭, অক্টোবরে ৭০ এবং নভেম্বরে ৭৭ টাকা করা হয়। সবশেষ জানুয়ারিতে দুই দফায় কমানো হয়েছিল ৪ টাকা।
একইভাবে আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইটের জন্য ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে জেট তেলের দাম নির্ধারণ করা হয় প্রতি লিটার ৫০ সেন্ট (৪২ টাকা)। মার্চে ৫৫ সেন্ট (৪৬ দশমিক ৭৫ টাকা), মে মাসে ৫৬ সেন্ট (৪৭ দশমিক ৬ টাকা), জুনে ৫৯ সেন্ট (৫০ দশমিক ১৬ টাকা), জুলাইয়ে ৬২ সেন্ট (৫২ দশমিক ৭ টাকা), আগস্টে ৬৩ সেন্ট (৫৩ দশমিক ৫৫ টাকা), অক্টোবরে ৬৫ সেন্ট (৫৫ দশমিক ২৫ টাকা) এবং নভেম্বরে ৭৩ সেন্ট (৬২ দশমিক ০৫ টাকা)। পরে অবশ্য কমিয়ে ৬৭ সেন্ট করা হয়।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি এয়ারলাইন্সের ৪০ শতাংশ পরিচালন ব্যয় হয় বিমানের জ্বালানিতে। বিমানের জ্বালানির দাম যত বেশি হয়, ব্যয় তত বাড়ে। যেসব দেশ কম দামে তেল কিনছে, তাদের পরিচালন ব্যয় কম হচ্ছে, যাত্রীদের জন্য তারা কম দামে টিকিট দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে বিমানের তেলের অতিরিক্ত দামের প্রভাবে এয়ারলাইনস প্রতিষ্ঠানের রাজস্ব দিন দিন কমতে থাকে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে আন্তর্জাতিক এভিয়েশন বাজারের প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়বে বাংলাদেশের এয়ারলাইনসগুলো। এমনকি রিজেন্ট, জিএমজি এবং ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পেছনেও নিজেদের অতিরিক্ত পরিচালন ব্যয়ের কথা উল্লেখ করেছে।
বিশিষ্ট এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান কাজী ওয়াহিদুল আলম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এয়ারলাইনসগুলো দীর্ঘদিন ধরেই বিমানের তেলের দাম কমানোর কথা বলে আসছে। তবে বিপিসি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। করোনাকালে যখন বাংলাদেশের এয়ারলাইনসগুলো নানাভাবে বিপত্তির সম্মুখীন হচ্ছে, সেই সময়ে এক বছরের মধ্যে কয়েকবার বাড়িয়েছে তেলের দাম। এতে আমাদের এয়ারলাইনসগুলো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো কম দামে নিজ দেশ থেকে তেল কেনার ফলে তারা কম ভাড়ায় যাত্রী বহন করতে পারছে।’