কাশ্মীর হামলার পর চরম উত্তেজনা: ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের টানাপোড়েন
মৃধা রানা, রিপোর্টার একুশে বিডি
-
প্রকাশিতঃ
শুক্রবার, ২ মে, ২০২৫
-
৫০
জন নিউজটি পড়েছেন
কাশ্মীরের পাহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্ক গত সাত দিনে দ্রুত অবনতি ঘটেছে। রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং সামরিক পরিমণ্ডলে এই উত্তেজনা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক করে তুলেছে।
পাহেলগাম হামলা: সম্পর্ক চরমে

২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পাহেলগামে পর্যটকবাহী একটি বাসে বিস্ফোরণে ২৬ জন নিহত হন, যাদের অধিকাংশই হিন্দু তীর্থযাত্রী ছিলেন। ভারত সরকার হামলার জন্য পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-ই-তইয়্যেবা ও দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টকে দায়ী করে। ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরাসরি পাকিস্তানকে “সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক” হিসেবে আখ্যা দেন।
পাকিস্তান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এবং দাবি করে যে এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ব্যর্থতা। ইসলামাবাদ থেকে জানানো হয়, ভারতের এমন অভিযোগ “অভ্যন্তরীণ রাজনীতির অংশ এবং সত্যের সঙ্গে অসংগত।”
কূটনৈতিক সম্পর্কের স্থগিত যুদ্ধ
ঘটনার পরপরই নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ একে অন্যের কূটনীতিকদের বহিষ্কার করে। ভারত পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য ভিসা বন্ধ করে দেয়, আর পাকিস্তান শিমলা চুক্তি ও দুই দেশের বাণিজ্যিক ও বিমান যোগাযোগ স্থগিত করে। এতে দুই দেশের মধ্যে সব ধরনের সংলাপ কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।
ভারতের পক্ষ থেকে ১৯৬০ সালের ঐতিহাসিক ইন্দাস পানি চুক্তিও সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়, যা দুই দেশের মধ্যে পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে একটি মূল ভিত্তি।
সীমান্তে সামরিক প্রস্তুতি
কাশ্মীর সীমান্তে ভারত ‘অ্যাক্রমণ’ নামের বিশাল সামরিক মহড়া শুরু করে, যেখানে রাফাল যুদ্ধবিমান ও অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রদর্শিত হয়। পাল্টা জবাবে পাকিস্তানও এলওসি-তে সেনা সংখ্যা বাড়ায় এবং বিমান প্রতিরক্ষা ইউনিট মোতায়েন করে।
সীমান্তে গত কয়েকদিনে দু’দেশের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে, যদিও সরকারিভাবে উভয় পক্ষই তা অস্বীকার করছে।
অর্থনৈতিক ধাক্কা
পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধের কারণে ভারতের জাতীয় বিমান সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া বছরে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলারের অতিরিক্ত খরচে পড়তে পারে বলে জানায়। সংস্থাটি সরকারিভাবে আর্থিক সহায়তা চেয়েছে।
পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বর্তমানে ১২% সুদের হার অপরিবর্তিত রেখেছে। বিশ্লেষকদের মতে, উত্তেজনার ফলে দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি ও বিনিয়োগ সংকট আরও বাড়বে।
আন্তর্জাতিক মহলের প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘ মহাসচিব হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, “সন্ত্রাসী হামলায় বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘন।”
যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বলেন, “ভারতের প্রতিক্রিয়া যেন বড় আকারের যুদ্ধ ডেকে না আনে, সেই বিষয়ে ভারতকে সতর্ক থাকতে হবে। একইসঙ্গে পাকিস্তানকে জঙ্গি দমনে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।”
চীন, রাশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও দুই দেশকে “আত্মসংযম” ও “সংলাপের পথে” ফেরার আহ্বান জানিয়েছে।
ক্রিকেট কূটনীতির ছায়া
২০২৫ সালের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও, ভারত সেখানে না গিয়ে আমিরাতে খেলার সিদ্ধান্ত নেয়। আইসিসি ‘হাইব্রিড মডেল’ অনুমোদন করেছে, যার মাধ্যমে ভারতের সব ম্যাচ আমিরাতে অনুষ্ঠিত হবে।
সাবেক পাকিস্তানি ক্রিকেটার মইন খান বলেন, “ক্রিকেট সম্পর্ককে বন্ধ করা কোনো সমাধান নয়। বরং এটাই হতে পারে কূটনীতির এক শান্তিপূর্ণ পথ।”
কাশ্মীরের ঘটনার পর মাত্র সাত দিনের ব্যবধানে ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ক কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছে। দু’দেশের নেতারা যদি সংযম না দেখান, তবে এই সংঘাত একটি বড় ধরনের যুদ্ধের দিকেও যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় শান্তিপূর্ণ সমাধানের যে আহ্বান জানাচ্ছে, তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব এখন মূলত দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের কাঁধে।
সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি, টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য টাইমস, ডন নিউজ, আল জাজিরা ।
Like this:
Like Loading...
Related
একুশে বিডি ডটকম এর জন্য সারাদেশে সংবাদ দাতা নিয়োগ চলছে
যোগাযোগঃ- 01773411136,01778927878 ekusheybd2021@gmail.com
আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন
আরও পড়ুন