ব্যবসায়ী মহসিন খানের লাইভে এসে পিস্তল ঠেকিয়ে মাথায় গুলি করে আত্মহত্যার ভিডিও যারা দেখেছেন তাদেরকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ। মূলত ওই ঘটনার লাইভ দেখা ব্যক্তিদের সচেতন করতেই তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সিআইডি।
বুধবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আত্মহত্যা প্রতিরোধবিষয়ক এক সেমিনারে সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান বলেন, মহসিন খান যখন লাইভ শুরু করেছিলেন তখন কারা কারা লাইভ দেখছিলেন, আমরা সাইবার পুলিশ থেকে তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি, যাতে ভবিষ্যতের জন্য তাদের সচেতন করা যায়।
এ সময় তিনি আরো বলেন, ফেসবুক আমাদের জানিয়েছে, মহসিন সাড়ে ১৬ মিনিটের বেশি লাইভে ছিলেন। কিন্তু প্রথম দিকে তিনি যেভাবে কথা বলছিলেন তাতে করে ফেসবুক বুঝতে পারেনি মহসিন খান আত্মহত্যা করবেন। প্রথমে তিনি পরিবার, ব্যক্তিগত জীবন, ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কথা বলছিলেন। লাইভের শেষের আড়াই মিনিট আগে ফেসবুক বুঝতে পারে মহসিন আত্মহত্যা করবেন।
শুধু মহসিন নয়, ২০১৭ সালে ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যা করেছিলেন ৫৪ বছর বয়সী তুরস্কের আয়হান উজুন। আত্মহত্যার আগে লাইভে এসে তিনি বলেছিলেন, আমার মেয়ে বিয়ে করছে। কিন্তু তার এ বিয়েতে আমি রাজি নই। এর-কিছুক্ষণ পরই তিনি আত্মহত্যা করেন পিস্তল ঠেকিয়ে।
এ ঘটনার পর ফেসবুক নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। কেনো এসব আত্মহত্যা ঠেকানো যাচ্ছে না তা নিয়ে কথা উঠে। সমালোচনার মুখে এ সময় ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করে, বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তারা ফেসবুকে আত্মহত্যার প্রবণতা শনাক্ত করবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
তবে মহসিন খানের সাম্প্রতিক আত্মহত্যার কারণে আবারো সমালোচনার মুখে পড়েছে ফেসবুক। তার ১৬ মিনিটের লাইভে যেমন কার্যত কোনো ব্যবস্থাই নিতে পারেনি তারা, ঠিক তেমনই লাইভ শেষে আত্মহত্যার ভিডিওটি সরিয়ে নিয়েছে বললেও এখনো তা পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। তাই প্রশ্ন আসছে, আত্মহত্যা ঠেকাতে কি করছে ফেসবুক?
এ প্রসঙ্গে প্রযুক্তিবিদ সালাউদ্দিন সেলিম সময় সংবাদকে বলেন, ফেসবুকের আর্টিফিসিয়াল ইন্টিলিজেন্ট সিস্টেম মূলত দুইভাবে কাজ করে। প্রথমে কেউ ক্যাপশনে কি লিখেছে সেটা তারা পরীক্ষা করে দেখে। যদি আত্মহত্যা বা এ ধরনের কিছু লিখা থাকে তাহলে তারা অ্যাকশনে যায়। অন্যটা হলো ভয়েজ ট্র্যাক করা। সেখানেও কি ধরনের কথা বলা হচ্ছে তারা তা চেক করে দেখে। তখন যদি এমন কোনো শব্দ পায় যেটায় মনে হয় সে কোনো আত্মহত্যা বা অপরাধমূলত কথা বলছে বা লিখেছে তখন তারা বিষয়টিকে আরো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা শুরু করে।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে মহসিনের সময় কেনো ফেসবুক কিছু করলো না? এ প্রশ্নের জবাবে সালাউদ্দিন সেলিম বলেন, মহসিন মূলত বাংলায় কথা বলছিলো। বাংলা ভাষায় গুগলও এখনো অতটা পারদর্শী নয়। সেখানে ফেসবুক আরো পিছিয়ে। যার কারণে ফেসবুক বুঝতে পারেনি তিনি আত্মহত্যা করতে যাচ্ছেন। আবার তিনি কিন্তু আত্মহত্যার আগে তেমন কোনো শব্দও বলেননি যাতে মনে হতে পারে তিনি আত্মহত্যা করবেন।
আরেকটা বিষয় হচ্ছে কেউ যদি লাইভ চলার সময় রিপোর্ট করতো তাহলেও ফেসবুকের মডারেটর টিম টের পেয়ে যেতো এবং পরবর্তী ধাপে অ্যাকশন নিতো। সেটা কিন্তু অটোমেটিক হয় না, মানুষই করে। কেউ হয়তো রিপোর্ট করেনি। করলে তারা ঠিকই সেটা টের পেয়ে যেতো।
সেক্ষেত্রে এই প্রযুক্তিবিদের কাছে প্রশ্ন ছিলো কেউ যদি আত্মহত্যা করার জন্য ফেসবুক লাইভে আসে এবং তা ফেসবুক বুঝতে পারে তখন কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়?
এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ফেসবুকের একটা মডারেটর টিম আছে যারা রিয়েল টাইমে এসব পর্যবেক্ষণ করে। তারা যদি বুঝতে পারে কেউ কোনো ধরনের আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে তখন সেই ব্যক্তির ফেসবুক ফ্রেন্ডদের কাছে নোটিফিকেশন পাঠিয়ে দেয়। তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়, তোমার ওই বন্ধুটি যথাসম্ভব আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে, তোমরা তার সাহায্যে এগিয়ে যাও। এভাবেই তারা সহায়তা করে। তবে সত্যি কথা বলতে গেলে ফেসবুকের কোটি কোটি ব্যবহারকারী রয়েছে। এতো এক্টিভ ব্যবহারকারীকে পর্যবেক্ষণে রাখাও অনেক কঠিন কাজ।
উল্লেখ্য, গত ২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ধানমন্ডির বাসায় ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যা করেন ব্যবসায়ী মহসিন খান। মুহূর্তেই সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়ে। ব্যবসায়ী মহসিন খান চিত্রনায়ক রিয়াজের শ্বশুর।