নতুন বছরে স্বপ্নের শুরু, সাদা পোশাকে টাইগারদের রঙিন যাত্রা। ব্যর্থতার ধারাবাহিক গল্পের বিপরীতে, এমন জয় আসবে ভাবেননি অনেকেই। টেস্ট চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে সাদা পোষাকে নতুন গল্প লিখেছে টাইগাররা। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তালিকায় নিচের দিকে থাকা বাংলাদেশ ইতিহাস গড়া এ জয়ে এক লাফে টেবিল তালিকায় পাঁচে উঠে এসেছে।
পাকিস্তানের বিপক্ষে পর পর দুই টেস্ট হেরে কোনও পয়েন্ট না পেয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তালিকার শেষে ছিল বাংলাদেশ। তবে নিউজিল্যান্ডকে প্রথম টেস্টে হারিয়ে বড় লাফ দিয়েছেন মুমিনুলরা। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শীর্ষে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, তালিকায় ভারতের পরেই রয়েছে বাংলাদেশ। ৩৩.৩৩ শতাংশ জয়ের হিসেবে পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। সাকিব-তামিমদের মতো অভিজ্ঞদের ছাড়াই তারুণ্যনির্ভর দলটির ইতিহাস গড়া পারফরম্যান্স। মুমিনুলের নেতৃত্বে লিটন-জয়-শান্তরা যেন আরও সাহসী। বার্তা দিয়ে রেখেছে নতুন বাংলাদেশের জন্য। সব ফরম্যাট মিলিয়ে ৩৩ চেষ্টার পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এলো আরাধ্য জয়। সাথে ব্ল্যাক ক্যাপদের নিজের মাঠে ১৭ টেস্টের অপরাজেয় যাত্রা থামাল মুমিনুলের দল।
আইসিসি-র প্রকাশিত নতুন তালিকায় শীর্ষে থাকা অস্ট্রেলিয়ার জয় শতভাগ। শ্রীলঙ্কারও জয় শতভাগ। তার পরেই পাকিস্তানের জয়ের শতাংশ ৭৫.০০। ভারতের জয় ৬৩.০৯ শতাংশ এবং বাংলাদেশের জয় ৩৩.৩৩ ভাগ।
তালিকায় দেখা যায়, এ পর্যন্ত একটি সিরিজ খেলে সেটি জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। শ্রীলঙ্কাও তাই। দু’টি সিরিজ খেলে দু’টিই জিতেছেন পাকিস্তান। ভারতও দু’টি সিরিজ খেলেছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জিতেছে অন্য দিকে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এগিয়ে থাকা অবস্থায় সিরিজ স্থগিত হয়েছে। শেষ টেস্ট খেলা এখনও বাকি। তৃতীয় সিরিজ শুরু হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। বাংলাদেশ পাকিস্থানের সঙ্গে একটি সিরিজ হেরেছে। দ্বিতীয় সিরিজে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে এগিয়ে গেল টাইগাররা।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হওয়ার পর মোট পয়েন্টের হিসেবে তালিকা করা হতো। কিন্তু সব দেশ সমান সংখ্যাক সিরিজ না খেলায় জয় পরাজয়ের হারের নিরিখে পয়েন্ট তালিকা তৈরি করা শুরু করে আইসিসি। সেই তালিকা অনুযায়ী ঠিক হয় কারা খেলবে ফাইনাল।
২০১৭ সালে মার্চের পর থেকে ঘরের মাঠে টেস্টে টানা ১৭ ম্যাচ অপরাজিত ছিল এ সংস্করণের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ড। সফরকারী সব দলের জন্যই নিউজিল্যান্ড সফর মানেই মিশন ইম্পসিবল। উপমহাদেশের দলগুলির জন্য আরও বেশি। পাকিস্তান এখানে সবশেষ টেস্ট জিতেছে ২০১১ সালে। ভারত সবশেষ জিতেছে ২০০৯ সালে। শ্রীলঙ্কা সবশেষ জিতেছে ২০০৬ সালে। আর নিউজিল্যান্ডের সবশেষ টেস্ট যে ১৩ জয় পেয়েছে তার মধ্যে ৮ টিতেই ইনিংস ব্যবধানে জয় পেয়েছে ঘরের মাঠে। বাংলাদেশের কাছে এ হারে ঘরে টানা ৬ টেস্ট জয়ের ধারায় ছেদ পড়ল নিউজিল্যান্ডের। ঘরে টানা আটটি টেস্ট সিরিজ জেতার পর থামতে হলো বাংলাদেশের সামনে।
২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় সারির দলের বিপক্ষে তাদের মাটিতে সিরিজ জয় বাদ দিলে এশিয়া ও জিম্বাবুয়ের বাইরে আগে কখনো টেস্ট জেতেনি বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ডের মাটিতে আগের ২১ টেস্টেই হেরেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ১৫টি আবার ইনিংস ব্যবধানে।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম জয়টি টেস্টে বাংলাদেশের ১৬তম। কিন্তু এরআগে বিদেশের মাটিতে কোন টেস্টেই এমন একচেটিয়া দাপট ছিল না টাইগারদের। টেস্টের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের মাটিতে নামিয়ে মুমিনুলরা এখন অনেকটা হাওয়ায় ভাসছেন।
তামিম ইনজুরিতে, সাকিব ছুটিতে। রিয়াদ টেস্টকে বিদায় বলে ফেলেছেন। আর মাশরাফী দৃশ্যপটের বাইরে। এদের ছাড়াও যে টাইগার ক্রিকেট সাফল্যের পথে হাঁটতে পারে সেই বিশ্বাস ছিল না অনেকের। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের পর এবার নতুন গল্পের শুরু টাইগারদের।