প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ন্যায্য মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে দেশের এক কোটি মানুষকে বিশেষ কার্ড দেয়া হবে। সরকারের সামাজিক সুরক্ষার বাইরে থাকা এক কোটি পরিবারকে দেয়া হবে এই কার্ড।
সাড়ে তিন বছর পর, মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) গণভবনে ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় তিনি এসব কথা বলেন। সরকার প্রধান জানান, দেশে যথেষ্ট খাদ্য মজুদ আছে।
করোনা মহামারীর দীর্ঘ সাড়ে তিন বছরের বিরতির পর এই প্রথম গণভবনে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক জোট ১৪ দলের নেতাদের সাথে বৈঠকে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৈঠকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ার বিষয়টি। সেই সঙ্গে কিভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে সেই নির্দেশনাও দেন ক্ষমতাসীন জোটের নেতাদের।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী জানান সরকারের কাছে যথেষ্ট খাদ্য মজুদ আছে। খাদ্য নিয়ে কোনো সংকট নেই। ভবিষ্যতেও হবে না।
তবে করোনা ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে কিছু ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েছে উল্লেখ করে হাসিনা জানান, পরিস্থিতি সামলাতে এক কোটি পরিবারকে দেয়া হবে বিশেষ কার্ড।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে যখন দাম বেড়ে যায় তখন খুব বেশি তো আমাদের কিছু করার থাকে না। এক্ষেত্রে কিছু তো কম্প্রোমাইজ করতে হবে। তবে রোজার সময় দ্রব্যমূল্য কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকে। যে ৩৮ লাখ লোককে আমরা টাকা দিচ্ছি, সেটা তো থাকবেই। সেটা ধরে আমরা আরও এক কোটি লোককে বিশেষ কার্ড করে দেবো।
তিনি বলেন, এর বাইরে ৫০ লাখ লোককে একটি কার্ড দেয়া আছে, তা দিয়ে তারা মাত্র ১০ টাকায় চাল কিনতে পারে, সেই ব্যবস্থা করা আছে। জনগণ যাতে ভালোভাবে বাঁচতে পারে সেটাই আমাদের লক্ষ্য বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মন্ত্রীপরিষদের বৈঠকে আলোচনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে টাস্কফোর্স গঠনের কথা বলেছি। মজুদ তেলের কোথাও ‘হোল্ডিং’ হচ্ছে কি না- তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ভোজ্যতেলের ভ্যাট কমিয়ে দেয়া বা একটু সমন্বয় করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছি। যাতে রমজান মাসে কোনো সমস্যা না হয়।
ভোজ্যতেলে দেশ এখনও ৯০ ভাগই পরনির্ভরশীল জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ভোজ্যতেলের ব্যাপারে আমরা পরনির্ভরশীল হয়ে গেছি। ইতোমধ্যে আমাদের বিজ্ঞানীরা সর্ষের কয়েকটি বীজ আবিষ্কার করেছেন যার ভালো উৎপাদন হবে। আগামী কয়েক বছরে পেঁয়াজ আর বাইরে থেকে আনতে হবে না, আমরাই রপ্তানি করতে পারব। এ ব্যাপারেও বিজ্ঞানীরা কাজ করছেন।
তিনি বলেন, প্রত্যেকটা জিনিস যেন আমরা নিজেরা উৎপাদন করে নিজেদের চাহিদা মেটাতে পারি সে রকম একটা অবস্থানে আমাদের যেতে হবে। কারো মুখাপেক্ষী হয়ে যেন থাকতে না হয়- সে জন্য আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি।
সরকারের কাছে যথেষ্ট খাদ্য মজুদ আছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, এখনো ১৮ লাখ টন খাদ্য মজুদ আছে আমাদের। সেখানে কোনো অসুবিধা নাই।
ফসল উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে তিনি এ সময় বলেন, কারো এতটুকু জমি যেন অনাবাদী না থাকে, যে যা পারেন সেটাই উৎপাদন করবেন। প্রত্যেকটা এলাকাতেই কিছু না কিছু উৎপাদন হবে। সেটাই আমার লক্ষ্য। তাতে আমাদের যে খাদ্য চাহিদা সেটা যেন পূরণ করতে পারি।
বৈঠকে নির্বাচন কমিশন গঠন ও সমসাময়িক রাজনীতি নিয়েও আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রপতির ডাকে আমরা গেলাম, বিএনপি যায়নি। যাবে কীভাবে, ক্ষমতায় গেলে কাকে প্রধানমন্ত্রী করবেন তারা? খালেদা জিয়া এতিমের টাকা খেয়ে সাজাপ্রাপ্ত, তারেক রহমান বিভিন্ন মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে পলাতক। বিএনপির তেমন কেউ নেই, তাই যা খুশি বলে তারা।
জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিতে আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলের প্রস্তাবে নির্বাচন কমিশন সংস্কারে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ যেমন ছবিসহ ভোটা তালিকা প্রণয়ন, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোট গ্রহণ এবং বর্তমানে ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পদক্ষেপের বিষয়টি তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এগুলো করাতে মানুষের ভোটের অধিকারটা নিশ্চিত হয়ে গেছে। এসময় বিএনপি সরকারের করে যাওয়া এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটারকে ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার কথাও তিনি স্মরণ করিয়ে দেন।
এছাড়া, জাতির পিতার রেখে যাওয়া স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় তুলে আনায় তার সরকারের সাফল্য উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, কিছু কিছু চ্যালেঞ্জ যা রয়েছে, সেগুলো মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলাপ আলোচনা চলছে।