মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের আড়ালেই চলতো মাদকের জমজমাট কারবার। সেই সঙ্গে রোগীদের শারীরিক নির্যাতন ও জিম্মি করে অর্থ আদায়ের ঘটনাও ঘটেছে।
আর এসব অভিযোগে গাজীপুর সদরের ভাওয়াল মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রটি সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। আটক করা হয়েছে কেন্দ্রটির নাজনিন ফিরোজা বাঁধনসহ পাঁচজনকে।
বুধবার দুপুরে র্যাব-২ ব্যাটেলিয়ন সদর দপ্তরে এক ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান এলিট ফোর্সটির মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
গাজীপুরের ভাওয়াল মাদকাশক্তি নিরাময় কেন্দ্র। যার বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। যার সত্যতা মেলে র্যাবের এই অভিযানে। তারা সেখানে হাজির হলে মর্মান্তিক দৃশ্যের অবতারণা হয়।
মাদকাসক্তির চিকিৎসার নামে সেখানে আটক থাকা রোগীরা যেন নতুন জীবন ফিরে পান। তুলে ধরেন অমানুষিক নির্যাতনের নানা চিত্র।
চিকিৎসার নামে এখানে রীতিমতো আটক ছিলেন চিত্রনায়ক অভি। সাংবাদিকদের তিনি জানান করোনাকালে ব্যবসায় বড় অঙ্কের ক্ষতির মুখে পড়ার পর তিনি মানসিক সমস্যায় পড়েন।
পরিবারের সদস্যরা তাকে এই নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করান। এরপর থেকে সেখানে তিনি দুর্বিসহ জীবন কাটাচ্ছিলেন। অভি জানান চিকিৎসা কেন্দ্র নয়, এটি আসলে একটি নির্যাতন কেন্দ্র।
মঙ্গলবার র্যাবের অভিযানে ২৮ জনকে উদ্ধার করা হয়। জব্দ হয় ৪২০ পিস ইয়াবা, নির্যাতনে ব্যবহৃত লাঠি, স্টিলের পাইপ, হাতকড়া, রশি, গামছা ও খেলনা পিস্তল।
র্যাব মুখপাত্র জানান, মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রটি ছিল মাদক কারবারের আখড়া। নিরাময় কেন্দ্রের আড়ালে সেখানে মাদক কারবার ছাড়াও নানা অনিয়ম ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলতো।
ভাওয়াল মাদকাশক্তি নিরাময় কেন্দ্রের মালিক ফিরোজা নাজনিন বাঁধন সেখানে চিকিৎসাধীন তরুণদের অনৈতিক কর্মকান্ডে ব্যবহার করতো।
এতে কেউ রাজি না হলে তাদের মাদকের লোভ দেখাতো এবং কেন্দ্রের কর্মীদের দিয়ে নানা ধরনের শারীরিক নির্যাতন চালাতো।
চিকিৎসার নামে শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন ও যৌন হয়রানি করা হতো। রশির সাহায্যে ঝুলিয়ে শারীরিক নির্যাতন করা হতো।
রোগীদের থেকে পর্যাপ্ত টাকা নিলেও সে অনুযায়ী সেবা-পরিচর্যা মিলতো না। ছিলো না কোনো চিকিৎসক। নিয়মবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত রোগী রাখা হয়েছিল সেখানে।
কেন্দ্রটির তিনটি রুমে ২৮ জনকে গাঁদাগাদি করে রাখা হতো। বিভিন্ন সময় সেবা প্রত্যাশীদের মারধর করা ছাড়াও নিন্মমানের খাবার পরিবেশন করা হতো।
কিন্তু পরিবারগুলো থেকে প্রথমে ভর্তি ফি তিন লাখ এবং প্রতিমাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা নেওয়া হতো। কিন্তু এতো টাকা নেওয়া হলেও সেবার মান ছিল খুবই নিম্নমানের।
নিরাময় কেন্দ্রে দুইজন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কোনো চিকিৎসককে সেখানে পাওয়া যায়নি। সেখানে ২০ জন রোগীর চিকিৎসার অনুমোদন থাকলেও ২৮ জন রোগী পাওয়া যায়।
মঙ্গলবার র্যাবের কয়েক ঘন্টার অভিযানের পর তাৎক্ষণিকভাবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়।
প্রতিষ্ঠানটির মালিক-কর্মচারিদরর তাৎক্ষণিক ডোপ টেস্টে প্রমাণিত হয় তারা সবাই মাদকাসক্ত। আসলে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের নামে সেখানে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করা হতো।
কেন্দ্রটির মালিক নাজনিন ফিরোজা বাঁধনসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধারায় মামলা হয়েছে।